Friday, April 28, 2006

আদমচরিত ০০৪

adam01

আদম বিড়বিড় করে, "এই স্বর্গটা শালা পুরা দুই নাম্বার হয়ে গেছে!"

ঈভ বলে, "বিড়বিড় করে কী বলো? গালি দাও নাকি?"

আদম উষ্ণ হয়ে ওঠে, বলে, "ঐ, তোমারে বিড়বিড় কইরা গালি দিমু ক্যান? জোরে গাইল দিতে পারি না? আমার নাম আদম, কোন হালারে আমি পুইছা চলি না, বোঝলা? আর গাইল তোমারে দিমু না ক্যান, বাপের বাড়ি থিকা কিছু আনছো যে সোহাগ কইরা কথা কমু?"

ঈভ ক্ষেপে ওঠে, বলে, "অ্যাদ্দিন চিল্লাচিলি্ল করলা, আমার লাইগা তোমার সিনার হাড্ডি একটা শর্ট পড়ছে, বুকটা খালি খালি লাগে, শ্বাস ফালাইতে কষ্ট হয়, আর আইজকা কও বাপের বাড়ির কথা? আর খবরদার, বাপের বাড়ির খোঁটা দিবা না!"

আদম ঝাড়ি খেয়ে চুপ করে থাকে, আবার বিড়বিড় করেবলে, "দুই নাম্বার, সব দুই নাম্বার!"

আদমের রাগ করার কারণ আছে। স্বর্গে যে তলে তলে অ্যাতো দুই নাম্বারি চলে, সে আগে টের পায়নি। স্বর্গদূতগুলো আদমের চেয়েও অনেক ঝানু।

জ্ঞানবৃক্ষের ফল নিয়েই যত ঘাপলা লেগেছে।

টহলদার মুশকো স্বর্গদূতটাকে জপিয়ে বেশ বশে এনে ফেলা গেছে, ভেবেছিলো আদম। কিন্তু টহলদারের পালা যে আবার কিছুদিন পর পর পালটায় তা তো আর আদমের জানা ছিলো না। সেদিন সন্ধ্যায় জ্ঞানবৃক্ষের কাছে গিয়ে সে দেখে, আগেরটার চে মুশকোতর আরেক স্বর্গদূত দাঁড়িয়ে, এর হাতে আবার নানচাক্কু, হাবভাবও সুবিধার না। আদমকে দেখেই সাঁই সাঁই করে নানচাক্কু নেড়ে এক পেল্লায় ধমক, "আদম! দূর হও এখান থেকে!" ধমক খেয়ে আদমের পিলে চমকে গিয়েছিলো। বাপরে! হনহন করে উলটোদিকে চলতে চলতে সে বিড়বিড় করে বলে, "দ্যাখো কান্ড! এই সেদিন প্রণাম করলি ব্যাটা, আর আজ ধমকাস! রোসো, আমারও দিন আসবে!"

বলতে না বলতেই হঠাৎ কোত্থেকে চিমসে এক স্বর্গদূত এসে ফিসফিস করে বললো, "লাগবে নাকি কত্তা? কচি মাল আছে, একদম ফেরেস!"

আদম থমকে দাঁড়িয়ে পড়ে, তারপর বলে, "না না, আমার কচি মালটাল লাগবে না, আমার ঈভ আছে ঘরে!"

স্বর্গদূত হেসে কুটিপাটি হয়ে পড়ে। বলে, "ওরে শোন শোন, তোরা আদমকত্তার কথা শোন! ... না না কত্তা, আপনাকে কচি কোন স্বর্গছুঁড়ির কথা বলছি না। আর এখনও তো জ্ঞানবৃক্ষের ফলই পেটে পড়লো না আপনার, আবার ঈভ দ্যাখাচ্ছেন আমাকে, হো হো হো!"

আদম চটেমটে লাল হয়ে যায়, কিন্তু কিছু বলতে পারে না।

স্বর্গদূত চিমসেটা কানের কাছে এসে ফিসফিস করে বলে, "কচি মাল মানে জ্ঞানবৃক্ষের ফল কত্তা! একেবারে ফেরেস। টাটকা পেড়ে আনা! চলবে নাকি?"

আদম একেবারে উলু দিয়ে ওঠে খুশিতে, দূর থেকে টহলদার মুশকোটা হুঙ্কার দ্যায়, "ঐ ক্যাঠারে ঐখানে?"

চিমসে স্বর্গদূত আদমের হাত ধরে একটা ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায়, "আস্তে কত্তা আস্তে! চেঁচাবেন খেয়েদেয়ে! এখন চুপ করে শুনুন!"

জ্ঞানবৃক্ষের ফলের দাম শুনে আদম ভড়কে যায়। স্বর্গে তো আর মুদ্রাব্যবস্থা নেই, মালের বদলে মাল। ঈশ্বরের কাছে কিছু তদবির করে দিতে হবে আদমকে। আদম তদবিরের বর্ণনা শুনে আরো ভড়কে যায়। কিন্তু লোভের কাছে নত হয় শেষ পর্যন্ত। চিমসে স্বর্গদূত একটা চটের পোঁটলাতে করে কিছু একটা দেয় আদমকে।

"চুপিচুপি কোথাও গিয়ে খান। ধরা পড়লে কিন্তু জামিন নাই! একেবারে লাত্থি দিয়ে বার করে দেয়া হবে! হুঁশিয়ার!"

আদম সেই পোঁটলা হাতে করে উর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আরেক ঝোপের পেছনে বসে গিয়ে অন্ধকারে গপগপ করে জ্ঞানবৃক্ষের ফল খায়। ওয়াক থু! এমন বিশ্রী স্বাদ কোন খাবারের হতে পারে? তিতা আর টকের মাঝামাঝি আরেকটা বিশ্রী জিভে বৈরাগ্য ধরানো স্বাদ, আর গন্ধটা তো অবর্ণনীয়! জ্ঞানবৃক্ষের ফল খেয়ে বেশিদূর যেতে পারে না আদম, মিনিট পনেরো বাড়ির পথে হাঁটতেই প্রবল পেট মোচড়ায় তার। ঝোপেঝাড়ে প্রবল শব্দ সহযোগে কাজ সেরে খানিক দূর যেতে না যেতে আবার। তারপর আবার। তারপর আবারও।

এমনি করে আটবার এমন ঝোড়ো টয়লেট সেরে ঘরে ফিরতে পারে সে। বাড়ি ফিরে সে শোনে ঈভ ঘ্যান ঘ্যান করছে। বাজারে কোন স্বর্গদূত নাকি কার্বাইড দিয়ে পাকানো কলা বিক্রি করেছিলো গতকাল, ঐ খেয়ে ঈভের পেটটা নাকি একটু চিনচিন করছে।

আদম রাগে বাক্যহারা হয়ে যায় এ কথা শুনে। তাহলে জ্ঞানবৃক্ষের ফলও নিশ্চয়ই ওরকম কার্বাইড গোছের কিছু দিয়ে পাকিয়ে তোলা! জ্ঞান তো হয়নি কিছুই, বরং যা ছিলো বিপথে বেরিয়ে যাবার যোগাড়! তার ওপর ঈভের প্যানপ্যানানি। ওরে মাগী, পেটের যন্ত্রণা তুই বুঝিস কী?

আদম বিড়বিড় করে ঈভকে অভিশাপ দ্যায়, "দাঁড়া না, জ্ঞানবৃক্ষের ভ্যাজালমুক্ত টাটকা ফল হাতের নাগালে আসুক, পেট ব্যথা কাকে বলে তোকে রগে রগে বুঝিয়ে ছাড়বো!"

No comments: