গিবরিল তাহার রশ্মিনির্মিত নাসিকা ডাকাইয়া ঘুমাইতেছিল। দরজায় পদাঘাতের শব্দ শুনিয়া সে ধড়মড়িয়া ঘুম ভাঙিয়া উঠিয়া বসিয়া চক্ষু রগড়াইল।
আদম অধৈর্য হইয়া কহিল, "আব্বে বারবণিতার সন্তান, দুয়ার খুলিবি নাকি অগ্নিসংযোগ করিব?"
গিবরিল হতচকিত হইয়া লুঙ্গির গ্রন্থি ঠিক করিতে করিতে গিয়া দরজা খুলিল। আদম একটি বড়সড় ঠোঙা হস্তে তাহাকে ঠেলিয়া ঘরে প্রবেশ করিয়া দরজায় অর্গল তুলিয়া হাঁপাইতে লাগিল।
গিবরিল কহিল, "কী হইয়াছে আদম? চুরি করিয়া ফিরিলে নাকি?"
আদম ওষ্ঠে তর্জনী ঠেকাইয়া কহিল, "শশশশশশশ! আস্তে!"
গিবরিল তাহার রশ্মিনির্মিত নাসিকা কুঁচকাইয়া বাতাস শুঁকিয়া কহিল, "এ কী? নিষিদ্ধ ফলের গন্ধ কেন ঘরে?"
আদম তাহার ঠোঙা খুলিয়া দেখাইল, অভ্যন্তরে কয়েকটি সুপক্ক নিষিদ্ধ ফল, ঘ্রাণে চতুর্পাশ আমোদিত।
গিবরিল আতঙ্কিত হইয়া কহিল, "এ কী করিয়াছ হে মৃত্তিকাপুত্র?"
আদম কহিল, "রশ্মিঠোলারা ডগ স্কোয়াড লইয়া তাড়া করিয়াছে! এখন কী করিব?"
গিবরিল কহিল, "সর্বনাশ! তোমার সহিত আমাকেও এখন গেরেফতার করিবে দেখিতেছি!"
আদম কহিল, "কুইক, শয়তানকে এসেমেস পাঠাও! এখন শয়তানের পরামর্শ ছাড়া গতি নাই!"
গিবরিল মোবাইল খুলিয়া শয়তানকে এসেমেস করিল, আদম ইল কাম শার্প।
মিনিট পাঁচেক পরেই শয়তান সর্পিল গতিতে গিবরিলের জানালা দিয়া ঘরে প্রবেশ করিল। আদম তাহাকে দেখিয়া ফুঁপাইয়া উঠিয়া কহিল, "দোস্ত, একটা উপায় বল!"
শয়তান পরিস্থিতি বিস্তারিত জানিয়া আরাম কেদারায় বসিয়া হুঁকায় তামাক টানিতে টানিতে কহিল, "ঈশ্বর তোমাকে ঠিকই কানে ধরিয়া দরবারে হাজির করাইবে। লোকটি বড় বদ। সর্বদাই পাপের শাস্তি প্রদানে মুখাইয়া থাকে। হতভাগা আমার পশ্চাতে দীর্ঘদিন ধরিয়া লাগিয়া আছে, তাহাকে আমি অস্থিরন্ধ্রে চিনি। তোমাকে এখন ঘাগু দেখিয়া কয়েকটি উত্তরাধুনিককে ভাড়া খাটাইতে হইবে। যাহারা ফুকো, লাকাঁ, হেগেল, ফরহাদ মজহার, রন জেরেমি প্রভৃতি নাম আওড়াইতে পারে।"
আদম খসখস করিয়া প্যাপিরাসে টুকিতে লাগিল সব।
শয়তান কহিল, "ঈশ্বরকে প্রথমে "ডিসকোর্স" শব্দটি বারবার শুনাইতে হইবে। আমি লক্ষ্য করিয়া দেখিয়াছি, ব্যাটা ডিসকোর্স শব্দটি শুনিলেই উসখুস করে, ডানে বামে তাকায়। প্রতীয়মান হয়, শব্দটির অর্থ সে ভালোমতো জানে না। কাজেই তোমাকে বলিতে হইবে, নিষিদ্ধ ফল চুরির ডিসকোর্সটি লইয়া মিশেল ফুকো কী বলিয়াছেন, তাহা ঈশ্বর জানে কি না।"
আদম টুকিতে টুকিতে কহিল, "ফুকো কী বলিয়াছে?"
আদম কহিল, "খুঁজিয়া দেখিব মাপমতো কোনো কথা ফুকো বলিয়াছে কি না। না বলিলে নিজেরাই বসাইয়া লইব। ... যাহা বলিতেছিলাম, ডিসকোর্স শব্দটিতে যদি ঈশ্বর ঘায়েল না হন, তাহলে তোমাকে বলিতে হইবে কাউন্টার ন্যারেটিভের কথা। ঈশ্বরকে বুঝাইতে হইবে, নিষিদ্ধ ফল পাড়িয়া ভক্ষণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার গ্র্যান্ড ন্যারেটিভ ব্যতীত আরো বহু বিকল্প কাউন্টার ন্যারেটিভ থাকিতে পারে ডানে-বামে। উহাদের অস্বীকার করা অশিক্ষিতের কাজ। কাজেই তোমার এই নিষিদ্ধ ফল পাড়িয়া ভক্ষণ অনেক কাউন্টার-ন্যারেটিভের একটি মাত্র।"
আদম কহিল, "কীসব খটোমটো বলিতেছো, হিয়েরোগ্লিফিক্সে লিখিতে গিয়া হস্ত খসিয়া পড়ার উপক্রম!"
শয়তান মিটিমিটি হাসিয়া কহিল, "হস্ত দিয়া আর কী করিবে, নিষিদ্ধ ফল তো এখন হাতের নাগালে। তোমার যাবতীয় হস্তশিল্পের দায়িত্ব ঈভের ওপর ন্যস্ত করিও।"
আদম উৎফুল্ল হইয়া কহিল, "আবাজিগস! কিন্তু ডিসকোর্স আর কাউন্টার-ন্যারেটিভেই কি কাজ চলিবে? আর কোনো বদখদ শব্দ নাই?"
শয়তান তামাকে টান দিয়া কহিল, "আছে বৈকি। ডিকনস্ট্রাকশন। তরল ভয়। আর্টিফিশিয়াল কনস্ট্রাক্ট। মানবতাপ্রেমী শান্তিবাদ। উত্তর-উপনিবেশী সুফিবাদ। বৈশ্বিক মানবতাবোধ। ওরিয়েন্টালিজম। ইতিহাসের ডিসকার্সিভ ভিন্নপাঠ। জাতীয়তাবাদী ইগো। ... আরো লাগিবে?"
আদম উৎফুল্ল স্বরে টুকিতে টুকিতে কহিল, "আপাতত এগুলিই কাজে লাগাইতেছি। ঈশ্বর ভুদাইকে এইসব দিয়াই কাত করিব। হতভাগা তো মাদ্রাসায় গমনই করে নাই ঠিকমতো, গ্রহনক্ষত্র নির্মাণ লইয়া ব্যস্ত ছিল। আনপঢ় একখানা। এইসব শব্দ মারিয়া মারিয়া ব্যাটাকে ঘায়েল না করিয়াছি তো আমার নাম আদমই নহে!"
No comments:
Post a Comment