Monday, October 23, 2006

রহস্যগল্প ০০৮


পমি রহমান সিনে সাংবাদিক হলেও সে মাঝে মাঝে কাজের খবরের কাগজও পড়ে৷ গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া কয়েকটা খবরের কাগজ রাখেন, রহস্যভেদীদের সবসময় চারপাশের হালহকিকত সম্পর্কে ওয়াকি রাখতে হয়, তাই পমি রহমান চৌরাসিয়ার বাড়িতেই এসে খবরের কাগজটা পড়ে যায়৷ নিজের বাড়িতে তার কেবল সৌজন্য সংখ্যা সিনেপত্রিকা আসে৷ ওখানে সেন্টারফোল্ড পোস্টারগুলিকে সে কেটে দরজায় লাগায়, আর বাকিটা পত্রিকা অন্যান্য কাজে লাগায়, পড়ে না মোটেই৷

আজ খবরের কাগজে এসেছে অদ্ভূত শিরোনাম৷ "টয়লেট দানবের তান্ডব! দশ দিনে শতাধিক কমোড ধ্বংস!!"

পমি রহমান খবর পড়তে পড়তে শিহরিত হয়ে ওঠে৷ বলে, "চৌরাসিয়া সাহেব, খবর পড়েছেন?"

চৌরাসিয়া ভোগান্তির বোতলে চুমুক দ্যান, তারপর বলেন, "না, কী লিখেছে?"

পমি রহমান পড়তে থাকে৷ "নগরীর বিভিন্ন এলাকায় টয়লেট দানব নামে এক অদ্ভূত জীবের আবির্ভাব ঘটিয়াছে৷ এই জীবকে যাহারা চাক্ষুষ করিয়াছেন, তাহারা সকলেই জীবিত নাই, বেশিরভাগই হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ায় ব্যাঘাত পাইয়া পরকাল লভিয়াছেন৷ যাহারা প্রাণে রক্ষা পাইয়াছেন, সেইসব প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণে জানা যায়, টয়লেট দানবের উচ্চতা প্রায় দশ ফুট, বুকের ছাতি স্বাভাবিকের তুলনায় অনেকগুণ বর্ধিত৷ ইহারা হঠাত্‍ হঠাত্‍ আসিয়া জোর করিয়া লোকজনের ঘরে ঢুকিয়া তাহাদের টয়লেটে নাম্বার টু কর্মটি সম্পাদন করে৷ ইহাদের কীর্তি এতো বলিষ্ঠ যে একবার ব্যবহারের পর কমোড বা প্যান আর আস্ত থাকে না, চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া যায়৷ আক্রান্ত অনেকের ঘরের চাল মলত্যাগের ইম্প্যাক্টে উড়িয়া গিয়াছে বলিয়া স্থানীয়রা প্রতিবেদককে জানান৷ আর মলের দুর্গন্ধে ভিটামাটি চাঁটি হইবার উপক্রম৷ এর মধ্যে কয়েকজন সেই মলের দুর্গন্ধ সহ্য করিতে না পারিয়া আত্মহত্যা করিয়াছেন৷ স্থানীয়রা জানাইয়াছেন, উচ্চতায় দশফুট ও প্রশস্ত ছাতিঅলা এই টয়লেট দানবের বিপক্ষে তাহারা অসহায়৷ এই ব্যাপারে প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হইলে তাঁহারা জানান, কেউ থানায় ডায়রি করায় নাই, অতএব তাঁহাদের বসিয়া কান চুলকানো ছাড়া করার কিছু নাই৷"

চৌরাসিয়া বলেন, "হুমম৷!"

পমি রহমান বলে, "আমার ঘরে ঢুকে হাগতে আসলে একদম ঠেঙিয়ে বিষ ছেড়ে দোবো৷ কত্তবড় ফাজিল৷ অন্যের ঘরে বলপূর্বক প্রবেশ করে হাগা!"

চৌরাসিয়া বলে, "এখানেই সমস্যা৷ আপনি হাগতে না দিলে সে আমার ঘরে এসে ঢুকবে৷ হাগা চেপে রাখা খুব কষ্টকর রে ভাই৷ একে ধামাচাপা দিয়ে রাখা খুব জটিল কাজ, সবাই পারে না৷"

পমি রহমান বলে, "আপনার বাসায় ঢুকতে দেবেন না, তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়৷ খেদিয়ে দেবেন৷"

চৌরাসিয়া বলেন, "কিন্তু টয়লেট দানবের উচ্চতা ১০ ফিট বলছে না? ছাতিও সেই অনুপাতে চওড়া?"

পমি রহমান একটু বিমর্ষ হয়ে বলে, "হুঁ৷"

চৌরাসিয়া চিন্তিত হয়ে বলেন, "হুম!"

পমি রহমান আবার কাগজ পড়তে থাকে৷ খানিক বাদে সে উত্তেজিত হয়ে বলে, "আরে সবের্ানাশ, দেখেছেন নাকি, চীনে কী হয়েছে?"

চৌরাসিয়া বলেন, "না, কী হয়েছে?"

পমি রহমান পড়তে থাকে, "গতকল্য চীনের বেইজিং নগরীর অদূরে এক ক্ষেতের মধ্যে রাতারাতি এক বিশাল গর্তের সৃষ্টি হইয়াছে৷ গর্তটির ব্যাস বিশাল, তাহা হইতে ধূম উদগীরণ হইতেছে, এবং দুর্গন্ধে এলাকাবাসী গাঁটরিবোঁচকা বাঁধিয়া দেশান্তরী হইবার প্রচেষ্টায় লিপ্ত ও ক্ষিপ্ত৷ চৈনিক সরকার এ ঘটনায় রীতিমতো মূহ্যমান ও বিব্রত৷ উল্লেখ্য যে গর্তটির চেহারা উল্কাপাতের ঘাতবিন্দুর মতো হইলেও এলাকাবাসী উল্কার কথা নাকচ করিয়া দিয়া বলিয়াছে, তাহারা কিছুই দ্যাখে নাই, কিছুই শোনে নাই, শুধু শুঁকিয়াছে৷ গন্ধে তাহাদের প্রাণবায়ু কন্ঠগত৷ চৈনিক জাতি অপরিসীম খাচ্চর বলিয়া বিশ্বনিন্দিত, সেই তাহারাই যদি গন্ধের অভিযোগ করিয়া বিবাগী হয়, তাহলে সেই দুর্গন্ধ যে কীরূপ জোরালো হইতে পারে তা সহজেই অনুমেয়৷"




চৌরাসিয়া চিন্তিত হয়ে পড়েন৷ বলেন, "হুমম৷ মনে হচ্ছে, চীনেও বড়সড় কোন টয়লেট দানব ক্ষেতেখামারে গিয়ে বসে পড়েছিলো!"

পমি রহমান বলে, "কিছু ধরতে পারলেন ব্যাপারস্যাপার? আঁর তুন বালা ন লার! আঁরারে সমস্যার লগে লড়াই গরন ফরিব!"

চৌরাসিয়া কিন্তু ভোগান্তিতে চুমুক দিয়ে ভাবনায় ডুবে যান৷ দশদিন ধরে দশফুট উঁচু চওড়া ছাতির টয়লেট দানবের আক্রমণ, আবার এখন বেইজিঙে বড় স্কেলের উপদ্রব ...৷ তিনি মেলানোর চেষ্টা করেন৷ কী ঘটতে পারে দশ দিন আগে, যে রাতারাতি কিছু প্রাণীর উচ্চতা ১০ ফুট হয়ে গেলো, বুকের ছাতি চওড়া হয়ে গেলো ... আর এখনই বা বেইজিঙে কী হচ্ছে ...?


No comments: