ডাগদর সাব নির্বাচনে খাড়াইয়া জয়লাভ করিয়াছেন৷
তাঁহার দলের নাম বান্দরিক শক্তি৷ যখন দলের আকিকা করিয়াছিলেন, সকলেই খাবি খাইয়াছিলো৷ বান্দরিক শক্তি! তবে কি ডাগদর সাব গোপনে বান্দরের তেল সেবন করিয়া বিশেষ শক্তি লভিলেন নাকি?
তবে তাঁহার ভক্ত এক অধ্যাপক আসিয়া সব জল করিলেন৷ "বন্দর হইতে বান্দরিক৷ যেমন জগত হইতে জাগতিক৷ কলস হইতে কালসিক৷ বলদ হইতে বালদিক৷ ইত্যাদি৷"
লোকজন মুখের হাঁ বুজাইয়া কহিলো, "হাঁ, এইরূপ তো হইতেই পারে৷ কিন্তু বন্দর লইয়া অত টানা হ্যাঁচড়া ক্যানো?"
ডাগদর সাব একগাল হাসিয়া কহিলেন, "আমার শৈশব আর কৈশোর কাটিয়াছে বন্দরে বন্দরে বান্দরামি করিয়া৷ মানে বন্দর আর আমি, দুই হরিহরাত্মা৷ দুইজনে দুইজনার৷ বন্দর না থাকিলে আমি আজ থাকিতে পারিতাম না৷ তেমনি আমি না থাকিলে বন্দরও আর থাকিতে পারিবে না৷ তাই আমার জীবন যৌবন সবই আমি বন্দরের জন্য উজাড় করিবো৷ আমার এগিয়ে যাওয়ার প্রেরণা যোগাবে বন্দর৷ আমি বন্দরকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি যোগাবো৷ তাই আমার দলের নাম বান্দরিক শক্তি৷ আপনারা দলে দলে আসুন৷"
হাটেমাঠেঘাটে তখন বান্দরিক শক্তির নামে বিপুল প্রচারণা ঘটিলো৷ ডাগদর সাব কহিলেন, "আপনারা পাড়ায় পাড়ায়, মহল্লায় মহল্লায়, ""ডাগদরের দেওয়ানাগোষ্ঠী"" গঠন করুন৷ যাহারা ডাগদরের জন্য সুশীল রাজনীতি করবে৷ দুনর্ীতি করবে না৷ সন্ত্রাস করবে না৷ কথা কাটাকাটি করবে না৷ তারা হবে সুশীল৷ ক্ষুদ্রসূচিকার দাম নিয়মিত কলাটামূলাটাকচুটা বেচিয়া শোধ করিবে৷ তাহাদের বাড়ির চাল কষ্ট করিয়া খুলিয়া আনিতে হইবে না৷ তাহারা সব নগদে জোগাইবে৷ এইরূপে দেশ আগাইয়া যাইবে৷ হাত লাগান ভাইসব৷"
বান্দরিক শক্তির নামে বিপুল রব উঠিলো৷ কেহ বুঝিয়া হে না বুঝিয়া নারা দিতে লাগিলো ডাগদর সাবের নামে৷
ছাগুরাম একদিন পথ ধরিয়া যাইতেছিলো, সে কী ভাবিয়া ডাগদর সাবকে ধরিয়া বসিলো, বান্দরিক শক্তির প্রতীক করিতে হইবে ছাগল৷
ডাগদর সাব হাসিয়া খুন৷ বলিলেন, ছাগল তো গত সরকারের উন্নয়নের প্রতীক৷ আমি উহা লইবো কোন শোকে?
ছাগুরাম প্রচুর আর্গুমেন্ট করিতে উদ্যত হইলো, বুদ্ধির অভাবে করিতে পারিলো না, বিকল্প উপায় হিসেবে লাদি ছাড়িয়া ভ্যা ভ্যা করিতে লাগিলো৷
ডাগদর সাব হাসিয়া কহিলেন, তাছাড়া আমেরিকায় বড় দুই পার্টি হাতি আর গাধা মার্কা লইয়া বড় পেরেশানিতে আছে৷ সকলে তাহাদের লইয়া কার্টুন আঁকে৷ ছাগল লইয়া শেষে বিপদে পড়ি আর কি৷
ছাগুরাম তখন জেদ ধরিলো, ছাগল মার্কা না লইলে কাঁটাল পাতাকে মার্কা করিতে হইবে৷
কথাটি ডাগদর সাবের মনপূত হইলো৷ তিনি কহিলেন, বাহ, বেশ৷ কাঁটাল পাতার মধ্যে সমৃদ্ধি ও অগ্রগতির ইঙ্গিত রহিয়াছে৷ তাছাড়া বান্দরিক শক্তিও বৃদ্ধি পায় কাঁটাল পাতা খাইলে৷ ব্রাভো৷ উত্তম প্রস্তাব ছাগুরাম৷ আইস, তুমি আমার দলে সব্জিবিষয়ক পরামর্শদাতারূপে কাম করিবে৷
ছাগুরাম সানন্দে নাচিয়া রাজি হইলো৷
জনৈক সুশীল বাধা দিয়া কহিলো, ডাগদর সাব এ আপনি কী করিলেন? একটি ছাগলকে বান্দরিক শক্তিতে ঢুকাইলেন? এ কি ঠিক হইলো?
ডাগদর সাব বাধা দিয়া কহিলেন, আহ আর বিভেদ নয়৷ আগাইয়া যাইতে হবে৷ বান্দর ছাগল মানুষ খাটাস সকলকে আগাইয়া যাইতে হবে৷ এ জাতি পিছাইয়া থাকিতে পারে না৷
বলিয়া তিনি আকর্ণবিস্তৃত একটি হাসি দিলেন৷ প্রবল জেল্লা বাহির হইলো৷ দেশসুদ্ধ লোক সে হাসিতে ভুলিয়া কাঁটাল পাতায় সীল মারিয়া আসিলো৷
...
(চলিবেক)
No comments:
Post a Comment