Sunday, February 20, 2011

আদমচরিত ০৩৩


নন্দন কানন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি স্বর্গদূত লোটাসিল তাহার রশ্মিনির্মিত গলাটি খাঁকরাইয়া কহিল, "প্রিয় ক্রিকেটারবৃন্দ! আজ তোমাদের সামনে বক্তৃতা করিবেন স্বর্গের প্রথম আরারাতবিজয়ী, মৃত্তিকাপুত্র আদম! তিনি তোমাদের শিক্ষা দিবেন, কীরূপে ক্রিকেট ম্যাচে জয়লাভ করিতে হয়!"

আদম পর্বতপ্রমাণ বিকট হাসি মুখে ঝুলাইয়া মঞ্চে আরোহণ করিল। তাহার মুখে অক্সিজেনমুখোশ, চোখে তুষারচশমা, পায়ে কণ্টকিত পাদুকা। মাইক হাতে লইয়া সে কহিল, "প্রিয় ক্রিকেটাররা আমার! আজ আমি তোমাদের জানাইব, কী করিয়া চ্যাম্পিয়ন হইতে হয়!"

উপস্থিত সকলেই একে অপরের বদনপানে চাহিল।

আদম পকেট হইতে একটি চোথা বাহির করিয়া কহিল, "তোমরা তো নিয়মিত সাপ্তাহিক চান্দের আলো পাঠ কর। সেখানে বিশিষ্ট সাংবাদিক, গল্পকার, কবি, কলামিস্ট, চলচ্চিত্রনাট্যকার, ক্রিকেটবোদ্ধা, ঔপন্যাসিক, উত্তর পার্বত্য পর্বতারোহণ সংঘের সভাপতি ও চান্দের আলোর উপসম্পাদক স্বর্গদূত আনিসাইলের লেখা পাঠ করিয়া তোমরা তো জানই, কী মর্মান্তিক প্রচেষ্টায় আমি আরারাতশৃঙ্গ জয় করিয়াছি! তোমাদেরও একইরূপে সম্মুখে আগাইতে হইবে।"

সকলে আবার একে অপরের বদনদর্শন করিল।

আদম গলা খাঁকরাইয়া চোথা কনসল্ট করিয়া কহিল, "প্রথমে তোমাদিগকে একটি ক্রিকেট সংঘ খুলিতে হইবে। বিশিষ্ট সাংবাদিক, গল্পকার, কবি, কলামিস্ট, চলচ্চিত্রনাট্যকার, ক্রিকেটবোদ্ধা, ঔপন্যাসিক, উত্তর পার্বত্য পর্বতারোহণ সংঘের সভাপতি ও চান্দের আলোর উপসম্পাদক স্বর্গদূত আনিসাইলকে উহার সভাপতি পদে বসাইতে হইবে। যদিও সে ক্রিকেটের কিছুই বুঝে না। কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হইতে গেলে তাহাকে সঙ্গে লইতেই হইবে।"

ক্রিকেটাররা উসখুস করিয়া উঠিল।

আদম দমিল না। সে কহিল, "দ্বিতীয়ত, বিশিষ্ট ক্রীড়াসাংবাদিক ও ক্রিকেটজ্ঞ স্বর্গদূত উটপোঁদশুভ্রিলকে তোমাদের দলের কনসালট্যান্ট নিয়োগ করিতে হইবে। সেও বিশিষ্ট সাংবাদিক, গল্পকার, কবি, কলামিস্ট, চলচ্চিত্রনাট্যকার, ক্রিকেটবোদ্ধা, ঔপন্যাসিক, উত্তর পার্বত্য পর্বতারোহণ সংঘের সভাপতি ও চান্দের আলোর উপসম্পাদক স্বর্গদূত আনিসাইলের ন্যায় ক্রিকেট বুঝিতে অপারগ, কিন্তু চ্যাম্পিয়ন হইতে গেলে তাহাকে সঙ্গে লইতেই হইবে।"

ক্রিকেটাররা ব্যাপক উসখুস করিতে লাগিল।

আদম চোথার পানে চাহিয়া দৃপ্ত কণ্ঠে কহিল, "তোমাদের দলে ঠিক জায়গায় ঠিক ব্যক্তিটি নাই। যেভাবেই হউক না কেন স্বর্গদূত আশরাফিলকে দলে রাখিতে হইবে।"

কে বাদ পড়িবে, ইহা লইয়া মৃদু গুঞ্জন উঠিল ক্রিকেটারদের মাঝে।

আদম কহিল, "চ্যাম্পিয়ন হইতে গেলে পার্বত্যাঞ্চল হইতে সোমবাহাদুরতামাঙিলকে দলের ভাইস ক্যাপ্টেন নিয়োগ দিতে হইবে। যদিও সে ক্রিকেটের কিছুই জানে না, কিন্তু তাহার উপস্থিতি অতীব জরুরি।"

ক্রিকেটাররা হতবাক হইয়া পড়িল।

আদম কহিল, "বিশ্বকাপের ন্যায় বড় টুর্নামেন্টে জয়ী হইতে গেলে তোমাদের কিছু ছোটো টুর্নামেন্টে জয়লাভ করিতে হইবে। সেইগুলির আয়োজন করিতে হইবে লোকচক্ষুর আড়ালে, বহু দূরের কোনো স্টেডিয়ামে, যেইখানে কাকপক্ষীও নাই। সেইখানে গিয়া ভিডিও ক্যামেরাগুলি হইতে ব্যাটারি খুলিয়া লইতে হইবে। কোনো ছবি, ভিডিও যেন না থাকে! খেলায় জয়লাভ কর আর না কর, আসিয়া বলিতে হইবে তোমরাই জয়লাভ করিয়াছ! ভয় করিও না, সোমবাহাদুরতামাঙিল তোমাদের হইয়া সাক্ষ্য দিবে। কোনো নালায়েক প্রমাণ চাহিলে বিশিষ্ট সাংবাদিক, গল্পকার, কবি, কলামিস্ট, চলচ্চিত্রনাট্যকার, ক্রিকেটবোদ্ধা, ঔপন্যাসিক, উত্তর পার্বত্য পর্বতারোহণ সংঘের সভাপতি ও চান্দের আলোর উপসম্পাদক স্বর্গদূত আনিসাইল তাহাকে সামাল দিবেন।"

ক্রিকেটাররা হতবিহ্বল কণ্ঠে প্রতিবাদ করিয়া উঠিল।

আদম পাত্তা না দিয়া কহিল, "ইহাই আরারাতজয়ের কৌশল। অতএব তোমরা আগাইয়া চল, বাকিটা উটপোঁদশুভ্রিল ও বিশিষ্ট সাংবাদিক, গল্পকার, কবি, কলামিস্ট, চলচ্চিত্রনাট্যকার, ক্রিকেটবোদ্ধা, ঔপন্যাসিক, উত্তর পার্বত্য পর্বতারোহণ সংঘের সভাপতি ও চান্দের আলোর উপসম্পাদক স্বর্গদূত আনিসাইল ম্যানেজ করিবেন।"

ক্রিকেটাররা ক্ষুব্ধ কণ্ঠে নানা নারা তুলিল।

আদম হাসিমুখে কহিল, "আজ তোমরা শিখিলে কীরূপে চ্যাম্পিয়ন হইতে হয়। এখন আমাকে প্রণাম কর।"

ক্রিকেটার স্বর্গদূতেরা গোমড়ামুখে সকলে আদমকে প্রণাম করিল, কিন্তু একজন ক্রিকেটার মুখ গোঁজ করিয়া দাঁড়াইয়া রহিল, প্রণাম করিল না।

আদম গিবরিলের কানে কানে কহিল, "এই বেয়াদবটি কে?"

গিবরিল কহিল, "উহার নাম শয়তান!"

আদম হাতে কীল মারিয়া কহিল, "হতচ্ছাড়া আমাকে প্রণাম করিল না দেখিতেছি! উহাকে শুধু দল হইতে নয়, স্বর্গ হইতেই খেদাইয়া দেওয়ার সুপারিশ করিব ঈশ্বরের কাছে!"

No comments: