Sunday, September 04, 2011

পদরজ মাগিতেছি নমিয়া


রবিবার প্রত্যূষখানি আজ কিছুটা বৃষ্টিস্নাত ছিল, কিন্তু দৈনিক প্রথম আলোতে ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের সাক্ষাৎকারখানি পড়িয়া মনের মেঘ কাটিয়া গেল। সাক্ষাৎকর্তা তারেক মাহমুদের প্রতি জানাই সশ্রদ্ধ নমস্কার।

এতদিন ধরিয়া আদমচরিত আর ভোদাইচরিতমানস নামক দুইখানি আবোলতাবোল সিরিজে রম্যস্যাটায়ার মারিবার ব্যর্থ চেষ্টা করিয়া আসিতেছিলাম। লোক হাসাইবার উদ্দেশ্যেই। লোকে যে হাসিত না, এমনটি নহে। কেহ কেহ হাসিত, কেহ কেহ ব্যাজার হইত, মোটের উপর স্যাটায়ারের কার্য যাহা, তা চরিতার্থ হইত। কিন্তু আজ এই সাক্ষাৎকার পাঠ করিয়া আমি আমার কলম নামাইয়া রাখিতে চাহি দৈনিক প্রথম আলোর ক্রীড়াপৃষ্ঠার বিভাগীয় সম্পাদক, সাংবাদিক তারেক মাহমুদ ও ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনের যৌথ ষড়ভূজের (পদের সংখ্যা কম কিংবা বেশি হইয়া থাকিলে জানাইবেন, তৎক্ষণাৎ ঠিক করিয়া লইব, আপনাদিগকে অপদস্থ করিবার সাহস অধমের নাই) গোড়ায়। তাহাদের চরণকমল হইতে পদরজ ক্ষুর দিয়া চাঁছিয়া (লক্ষ্য করিবেন, ক্ষুররজ পদ দিয়া চাঁছিয়া লিখি নাই কিন্তু) একটি চীনামাটির পাত্রে সংরক্ষণ করিয়া কুলুঙ্গিতে তুলিয়া রাখিব। আবারও কখনও যদি স্যাটায়ার লিখিতে বসি, সেই পদরজপাত্র মস্তকে ঠেকাইয়া লইব ঘনঘন।

সাক্ষাৎকারের শিরোনাম দেখিয়াই চমকিয়া চেয়ার হইতে আছড়াইয়া পড়িয়াছিলাম মাটিতে। খেলোয়াড় কেন শাহরুখ খান হইতে চায়? প্রথমেই মনে হইল, শাহাদাত নিজে আর ক্রিকেট খেলিতে চাহিতেছে না, সে কলিকাতা নিশীথারোহীর ন্যায় বড়সড় ক্রিকেট দলের মালিক বনিতে উদগ্রীব। মনে মনে তাহার বিবেচনাবোধ ও উচ্চাভিলাষের প্রশংসা করিতে করিতে বাকিটুকু পড়িবার উদ্যোগ নিলাম। যখন জাতীয় দলে ঢুকিতে সবাই বিষম লালায়িত, তখন এই যুবক নিজের দল গড়িতে চাহিতেছে। এ যেন সেনাবাহিনীতে ভর্তিপরীক্ষায় ফেল মারিয়া নিজের সেনাবাহিনী গড়িবার মতো, এ যেন মেডিকেল কলেজে পড়িবার সুযোগ বঞ্চিত হইয়া নিজেই হাসপাতাল খুলিয়া বসা, এ যেন ইউনিয়ন পরিষদের ইলেকশনে হারিয়া নিজের ভিটাকেই নতুন ইউনিয়ন বলিয়া ঘোষণা করা। বাহ রে যুবক, এই তো চাই!

কিন্তু বিঘতখান সাক্ষাৎকার পড়িয়াই মূক মারিয়া গেলাম। সাংবাদিক তারেক মাহমুদ সাক্ষাৎকার শুরুই করিয়াছেন ক্রিকেটার শাহাদাতের প্রেমজীবনে নাড়া দিয়া। পড়িয়া যা বুঝিলাম, শাহাদাত আগে প্রেম করিতেন, এখন প্রেম করিতেছেন না। বিবাহেও তাহার সহসা রুচি নাই। পাত্রী কেমন হওয়া উচিত, তাহা সম্পর্কেও তিনি পরিষ্কার ধারণা রাখেন না। তবে তারেক মাহমুদ খেই ধরাইয়া দেওয়ার পর তিনি জানাইলেন, তাহার যোগ্যা পাত্রীকে হইতে হইবে

ক. লম্বা এবং
খ. ফরসা এবং
গ. দেখিতে সুন্দর

তিনি নিজে ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা, কিন্তু এই উচ্চতার সীমা লইয়া নিঃসন্দেহ নন। রূপকথার সীম গাছের মতো তিনি আজও বাড়িতেছেন বলিয়া সন্দেহ পোষণ করেন। এই ক্রমবর্ধমান ক্রিকেটারটি আরো ফুটখানেক বাড়িবার পূর্বেই যে তাহাকে পাত্রীস্থ করা আমাদের জাতীয় দায়িত্ব, তাহা বুঝিবার জন্য রকেটবিজ্ঞানী হইতে হয় না। শাহাদাত আরো জানাইয়াছেন, পাত্রীকে তাহার সমান লম্বা না হইলেও চলিবে, দেশের খর্বাকৃতি নারীকূলের কথা বিবেচনা করিয়া তিনি বাসার দেয়ালে পাঁচ ফুট ছয় অথবা সাত ইঞ্চি বরাবর একটি দাগ কাটিয়াছেন। কোনো ফরসা চামড়ার দেখিতে সুন্দর তরুণীর মস্তক সেই দাগ স্পর্শ করিলেই তিনি কবুল উচ্চারণ করিয়া ফেলিবেন। আর হাঁ, বিদেশে তিনি কদাপি সন্বন্ধ স্থাপন করিবেন না।

সাংবাদিক তারেক মাহমুদ প্রেমিকার তথ্য যথেষ্ট পরিমাণ বাগাইতে না পারিয়া নারীভক্তকূলের দিকে অগ্রসর হইলেন। তাহার প্রশ্নের উত্তরে শাহাদাত জানাইলেন, নারীভক্তকূলের সাম্প্রতিক তথ্য তাহার কাছে হালনাগাদ করা নাই, তবে একদা তাহার প্রচুর নারীভক্ত ছিল। যখন তিনি সুদূর অতীতে জাতীয় দলে ছিলেন, তখন নারীভক্তের অভাব ছিল না। তবে সৃষ্টিকর্তার দাক্ষিণ্যে আজও তাহার নারীভক্তের সংখ্যা কম নহে, তাহারা তাকে ফোন করে, টোনও করে। সাংবাদিক তারেক মাহমুদ ব্যাকুল হইয়া জিজ্ঞাসিলেন, শুধু কি ফোন করে, নাকি দেখাসাক্ষাৎও হয়? জবাবে শাহাদাত রহস্য করিয়া কহিলেন, ফোন করে, আর দেখাসাক্ষাতের বিষয়টি বিগব্যাংপূর্ব স্থান ও কালের প্রকৃতির মতোই রহস্যপূর্ণ, ঐ বিষয়ে বলা বারণ। মরিয়া হইয়া সাংবাদিক তারেক মাহমুদ এইবার প্রেমের সংখ্যায় চলিয়া গেলেন। উত্তরে স্মিত হাসিয়া শাহাদাত প্রাণপণে স্মরণের চেষ্টা করিতে লাগিলেন, একের পর সংখ্যাটিকে কী বলিয়া ডাকা হয়। কিয়ৎক্ষণ ভাবিয়া যখন তাহা স্মরণাঙ্গণে আসিয়া দাঁড়াইল, তখন কহিলেন, "উমম...দুইটা দুইটা, হ্যাঁ দুইটা।" সেইসঙ্গে জাতি হাঁপ ছাড়িয়া বাঁচিল, যাক যুবক দুই পর্যন্ত গুণিতে জানে।

এরপর সাংবাদিক তারেক মাহমুদ জিজ্ঞাসিলেন, নারীরা কেন শাহাদাতকে এত পছন্দ করে? শাহাদাতও তাহার ঝুলি খুলিয়া বসিলেন।

আমরা জানিলাম, সর্বাপেক্ষা বড় কথা স্মার্টনেস। ইহা অনেকের মধ্যে না থাকিলেও শাহাদাতের মধ্যে সর্বাংশে আছে। শাহাদাত স্মার্টনেসের সংজ্ঞাও নির্ধারণ করিলেন অতঃপর, পরিচ্ছদ ও চালচলন। উচ্চতা স্মার্টনেসের একটি বড় উপাদান। শাহাদাত মনে করেন, উচ্চতা ও স্মার্টনেস পরস্পর সমানুপাতিক। তবে যারা শাহাদাতের সমান উচ্চতাবিশিষ্ট, তাহারাও শাহাদাত অপেক্ষা কম স্মার্ট, কারণ তাহারা অনেকেই "গুজা" হইয়া হাঁটেন। ন্যূব্জতার ফ্যাক্টরটি স্মার্টনেসের গণেশ উল্টাইয়া দিতে পারে, যাহা হইতে শাহাদাত মুক্ত। এমনকি তিনি স্মার্ট হইবার জন্য কোনো চেষ্টামাত্র করেন না। প্রকৃতির আপন চক্রে যেমন সূর্য পূর্ব দিকে উদিত হইয়া পশ্চিম দিকে অস্ত যায়, চন্দ্রের আকর্ষণে যেমন জোয়ার আর ভাটা পর্যায়ক্রমিক আসে যায়, তেমনি শাহাদাতও স্মার্ট। তিনি ভালো পোশাক পরেন, ভালো হাঁটেন, ভালো করিয়া মানুষের সহিত বাক্যালাপ করেন। তবে তিনি এই প্রাকৃতিক চক্রের বাইরেও নিজের ঈশ্বরদত্ত স্মার্টনেস ধরিয়া রাখিতে যথাক্রমে ব্রেট লি ও শোয়েব আখতারের দিকে নজর রাখেন। তাহার মতে, তাহার নজর বরাবর ঊর্ধ্বপানে ছিল, এখনও আছে। ব্রেট লি আর শোয়েব আখতারের হন্টন ও কথনভঙ্গিমা তিনি নিজের মধ্যে পুষ্পরূপে ফুটাইয়া তুলিতে সচেষ্ট। হয়তো ইহাতে তাহার ঈশ্বরদত্ত স্মার্টনেসের এমন কোনো বৃদ্ধি ঘটিবে না, কিন্তু ক্ষয় যাতে না ঘটে, সেই কূল রক্ষা পাইবে।

সাংবাদিক তারেক মাহমুদ প্রেম ও স্মার্টনেসের পর জুতাস্যাণ্ডেলের দিকে অগ্রসর হইতে গিয়াই থামিয়া পড়িলেন। কারণ শাহাদাত পাদুকা হইতে অধিক গুরুত্ব আরোপ করিয়া থাকেন শকটের উপর। পাদুকা নিয়া মাথা ঘামাইয়া থাকে তাহারা, যাহারা অন্তত কিছুদূর হাঁটিয়া অতিক্রমের ধান্ধায় থাকেন। শাহাদাত হাঁটা অপেক্ষা শকটারোহণ পছন্দ করিয়া থাকেন। তাহার বর্তমান শকটটি "ল্যাক্সাস", ইহার পূর্বে আরো কয়েকটি ছিল। তিনি এ যাবত প্রেমিকা মাত্র দুইখানি হাছিল করিলেও শকট বদলাইয়াছেন চারিখানা। ইহা হইতেই অনুমান করা যায়, দেশে যত ল্যাক্সাস আছে, তত ফরসাচামড়া-দেখিতেসুন্দর-পাঁচফিটছয়ইঞ্চির-শাহাদাতানুরাগী নারী নাই। দেশের এই দুর্যোগময় পরিস্থিতি লইয়া বেশি না ঘাঁটাইয়া সাংবাদিক তারেক মাহমুদ অনুসন্ধানে ব্রতী হইলেন, শাহাদাত তার প্রেমিকাদিগকে শকটে চড়াইয়া ঘুরাইয়া থাকেন কি না। শাহাদাত বিষণ্ণ হইয়া জানাইলেন, আগে ঘুরাইতেন। এখন তিনি চন্দ্র সূর্য ও হীরকরাজারবৈজ্ঞানিকের মতোই একা ও একক, তাই নিজেই ঘুরিয়া থাকেন।

এর পর সাংবাদিক তারেক মাহমুদ শাহাদাতের স্মার্টনেসের আধিক্যের সহিত সিনেমার নায়কের ভূমিকার একটি কোরিলেশন উদ্ভাবন করিলেন। শাহাদাত তখন পর্যবেক্ষন জানাইলেন যে এতক্ষণে সাংবাদিক তারেক মাহমুদ সত্য কথা বলিতেছেন (অর্থাৎ এর আগে সকলই গরল ভেল)। তিনি আজ এই দিনেই এই লইয়া চিন্তার মতো দুরূহ কাজে প্রবৃত্ত হইয়াছেন। জাতীয় দল হইতে খসিয়া পড়িবার পর শাহাদাত অসূর্যম্পশ্য কাল কাটাইতেছেন অন্দরমহলে, যেখানে সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মি ঢুকিবার স্পর্ধা করে না। ফলস্বরূপ তিনি ফরসা হইয়া গিয়াছেন। একে তিনি স্মার্ট, সোজা হইয়া হাঁটিতে পারেন, তাহার উপর ফরসা! কলাবাগান ক্লাবে তাহার এক অগ্রজপ্রতিম তাহাকে উপদেশ দিয়াছেন চলচ্চিত্রে অভিনয় করিয়া সাকিব খানের অন্নসংস্থান পণ্ড করিতে। আরেক অগ্রজ বলিয়াছেন, তিনি সিনেমায় নামিলে দেশের আবালবৃদ্ধবণিতা একবার হইলেও সেই সিনেমা দেখিতে ছুটিবে। তিনি আবারও ভাবনার মতো শক্ত কাজে কিয়ৎকাল কাটাইয়া সম্মতি দিয়াছেন। তবে নাটক, মডেলিঙে তিনি নামিবেন না। হনন করি তো গণ্ডার, লুণ্ঠন করি তো ভাণ্ডার। তিনি সরাসরি সিনেমাতেই নামিবেন। ইহাতে পরিচালকও লাভ করিতে পারিবে, তাহারও পরিচিতি বাড়িবে। সবাই ছুটিবে শাহাদাত কি সিনেমা করিল তাহা দেখিতে।

ইহার পর পরিষ্কার হইল, তিনি শাহরুখ খানের ন্যায় রোমান্টিক নায়ক হইতে চান। সাক্ষাৎকারের শিরোনাম তখন স্পষ্ট হইল। আজ সালাত আদায় করিয়া খোদার দরবারে দুই হস্ত জুড়িয়া মুনাজাত মারিব, হে পরওয়ারদিগার, এই লম্বা (এখনও বর্ধনশীল), গৃহবন্দিত্বের কারণে ফরসা ও সোজা হইয়া হাঁটিতে সক্ষম যুবকটির প্রতি তুমি করণ জোহরের দৃষ্টি স্থাপন করিয়া দ্যাও। পিলিজ।

নায়িকা হিসাবে শাহাদাত প্রীতি জিনতাকে পছন্দ করিয়াছেন। তবে দেশের নায়িকাদের তিনি পছন্দ করেন না। বিন্দুকে তাহার ভালো লাগে, কিন্তু বিন্দু নায়িকা নহে, মডেলমাত্র। দুয়েকজন পরিচালকের সাথেও তিনি যোগাযোগ করিয়াছেন। মাঝেমধ্যে এফডিসিতেও পদরজ দিয়া থাকেন। আর কদাপি ক্রিকেট ছাড়িবেন না। খেলিয়া খেলিয়া হয়রান হইয়া পড়িলে যখন তিন-চার মাস বিরতি পাইবেন, তখন তিনি সিনেমা করিবেন। আর নায়িকা হিসাবে তিনি বাংলাদেশের পৃথুলা নায়িকাদের তাহার উছিলায় ভাত খাইতে দিবেন না, মডেলদের মধ্য হইতে লম্বা ও সুন্দর কাউকে বাছিয়া লইবেন। আর কদাপি স্ক্যাণ্ডাল ছড়াইতে দিবেন না। স্ক্যাণ্ডাল যাতে না ছড়ায় সেই নিমিত্তে তিনি নিয়মিত সিনেমা না করিয়া হঠাৎ হঠাৎ করিবেন।

সাংবাদিক তারেক মাহমুদ একটি মূল্যবান পর্যবেক্ষণ হাজির করিলেন অতঃপর। সিনেমার নায়কেরা মেকআপ লইয়া তারকা, আর ক্রিকেটাররা মেকআপ না লইয়াই তারকা। ইহাতে শাহাদাত বিলক্ষণ ঐকমত্য পোষণ করিলেন। তিনি জানাইলেন, সিনেমায় একটি কৃষ্ণবর্ণ লোককে পাউডার প্রয়োগ করিয়া ফরসা করিয়া ফেলা হয়, যেখানে তিনি ঘরে বসিয়া থাকিয়া সূর্যের অতিবেগুনী রশ্মিকে অপক্ককদলী দেখাইয়াই ফরসা বনিতে পারেন। সৃষ্টিকর্তা তাহাকে আপনা হইতেই ফরসা করিয়া গড়িয়াছেন। তিনি খেদের সহিত কহেন, "চামড়া সাদা হলে তো আর সব হয় না।"

নায়ক হিসেবে শাহাদাত নিজের উচ্চতা ও মুখশ্রীর (যাহা আল্লাহর রহমতে ভালো) প্রতি গুরুত্ব দিয়াছেন।

সাংবাদিক তারেক মাহমুদ এরপর শাহাদাতের শরীরের রোমে হাত দিয়াছেন। তিনি জিজ্ঞাসিলেন, কেন শাহাদাত ক্ষৌরকর্ম করেন না? কেন সদ্যোদ্গত শ্মশ্রু লইয়া ঘুরাফিরা করেন? উত্তরে শাহাদাত জানাইয়াছেন, দাড়ির ব্যাপারে তিনি শহীদ আফ্রিদিকেই ধ্রুবতারা জ্ঞান করেন। সদ্য গজানো দাড়িতে আফ্রিদিকে মানায়, তাহাকেও নাকি ঐরকম দাড়িতে আফ্রিদির ন্যায় মনে হইয়া থাকে। প্রবাসে গিয়া যখন তার দাড়ি গজায়, তখন কেহই বিশ্বাস করে না যে তিনি বাংলাদেশ হইতে আগত। সবাই ধরিয়া লয় তিনি পাকিস্তানী। নিজের রূপের এই পাকিস্তানিতা বজায় রাখিতেই তিনি ক্ষৌরকর্মে মাঝেমধ্যে বিরতি দেন। ইহা ছাড়া আর কোনো ইয়ে ইহাতে নাই। নারীরা অবশ্য তাহার দাড়ি লইয়া ভাবিত নহে। কারণ তিনি দাড়ি রাখিলেও তাহারা মুগ্ধ, দাড়ি কামাইলেও তাহারা মুগ্ধ। শুধু ক্ষৌরকর্ম যেদিন সাধিত হয়, সেদিন তাহাকে দেখিয়া কুক্কুট বলিয়া সন্দেহ জাগে। তাই তিনি আফ্রিদির সহিত সাদৃশ্যকে বিসর্জন দিয়া মুরগির সহিত সাদৃশ্যকে বরণ করিতে নারাজ, তাই ক্ষৌরকর্ম জলাঞ্জলি দিয়া দাড়ি রাখিয়া থাকেন।

সাংবাদিক তারেক মাহমুদ সাক্ষাৎকারের মাদুর গুটাইতে গিয়া আবারও শাহাদাতের প্রেমজীবনে ফিরিয়া গেলেন। বান্ধবী নাই, এইরূপে আর কতদিন? শাহাদাত উত্তরে হাসিয়া কহিলেন, সাক্ষাৎকার ছাপা হইলেই নারীমহলে তোলপাড় পড়িবে যে শাহাদাত বর্তমানে নিঃসঙ্গ। সমস্যা তখনই ঘুচিবে।

সাক্ষাৎকার পূর্ণাকারে পাঠ করিয়া মনে যা জাগিলো, তাহার বিশদ বর্ণনা অবান্তর, তবে অবশিষ্ট রহিল শুধু শ্রদ্ধা। বাতিল ক্রিকেটারদিগকে প্রেমিকা ও সিনেমার রোল জুটাইয়া দিতে যখন ক্রীড়াসাংবাদিকরা আগাইয়া আসেন, তখন মনে আশা জাগে, আমাদের আশার ফুল আশরাফুল ভাইয়াও একদিন এমন করিয়া ক্রিকেট ত্যাজিয়া নাটক সিনেমায় পদার্পণ করিয়া আমাদের ক্রীড়া ও বিনোদনজগত, উভয়কে উপকৃত করিবেন।

জীবনে দুঃখ আছে, বেদনা আছে, আছে বিষাদ, অভিমান, গ্লানি, শোক, কষ্টকাতরতা। প্রকৃতি তাই ক্ষতিপূরণ হিসাবে সৃষ্টি করিয়াছে প্রথম আলোর ক্রীড়াপৃষ্ঠা, তাহার বিভাগীয় সম্পাদক, সাংবাদিক তারেক মাহমুদ ও ক্রিকেটার শাহাদাত হোসেনকে। বিপুলা এ জগত এক হাতে চটকানা মারিয়া যেমন কাঁদাইয়া থাকে, তেমনি অন্য হাতে কাতুকুতু দিয়া হাসাইয়া রাখে। মুখফোড়ের প্রণতি এই ইকুইলিব্রিয়ামের প্রতি। যাই, শেভ করিয়া রোদে রোদে একটু গুজা হইয়া হাঁটিয়া আসি।


No comments: