Tuesday, October 11, 2011

খচাৎ


আবদুলের নামটি তাহার পিতামহ যথার্থই রাখিয়াছিলেন। তাহার নিয়তিতে যে বেদুইনের দেশে দাসত্বই প্রকটাক্ষরে লিখিত ছিল, তাহা মুরুব্বিগণ পাঠ করিতে না পারিলে কে পারিবে?

অতএব কোনো এক হেমন্তের রাতে কৃষিজমি বন্ধক রাখিয়া অর্জিত অর্থ দালালের হস্তে সমর্পিয়া বেদুইনের দেশগামী একটি জাহাজে চড়িয়া বসিল আবদুল। বেদুইন বন্দর বালছালাহ বরাবর সেই পোতের নাক ঘুরিবার সময় আকাশের শুকতারা আবদুলের দিকে চাহিয়া চক্ষু মিটমিট করিল। আনপঢ় আবদুল নক্ষত্র বা বেদুইন, উভয়ের ভাষায় সমান অদক্ষ, কাজেই সে মজবুত করিয়া গলুইয়ের একাংশ ধরিয়া যাত্রাকাল পার করিবার এন্তেজাম করিল শুধু। শুকতারা দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া পাশ ফিরিয়া শুইল।

বালছালাহতে পদার্পণ করিবার পর আবদুলের কাগজপত্র দেখিয়া তাহার নিয়োগকর্তা তাহাকে ধরিয়া একটি উষ্ট্রচালিত শকটে খেদাইয়া তুলিল আরো কয়েকজন কর্মীর সহিত। তারপর সেই শকট মরুর বুক চিরিয়া চলিতে লাগিল, গন্তব্য মরুর বুকে কোনো এক মরুদ্যান শহর আল-গোমারাহ।

আল গোমারাহে পৌঁছিতে না পৌঁছিতেই আবদুলের নিয়োগকর্তা একটি পাজন হস্তে সকল কর্মীকে ব্যাপক হুড়া লাগাইলেন। রাখালতাড়িত ছাগের ন্যায় ছুটিতে ছুটিতে তাহারা একটি বাথানে ঢুকিয়া পড়িল। সেইখানে একপাশে ভেড়ার খোঁয়াড়, খোঁয়াড়ের এক কোণে ভেড়ার রাখালের খোঁয়াড়, তারই একটি সংকীর্ণ শয্যায় আবদুলের স্থান হইল। নিয়োগকর্তা একটি খর্জুরের রুটি আর একটি মৃৎপাত্রে পানি দিয়া আকারে ইঙ্গিতে তাহাদের দায়িত্ব এবং হাতের পাজন তুলিয়া প্রত্যেকের কুক্ষিদেশে গুতা মারিয়া সেই দায়িত্ব পালনে অপারগতার শাস্তি বুঝাইয়া দিয়া কাটিয়া পড়িলেন।

সেই হইতে আবদুল ভোর হইতে সন্ধ্যা পর্যন্ত দূর পাহাড়ের উপত্যকায় ভেড়ার পাল চরাইতে লইয়া যায়। তাহার কাগজপত্র সবই নিয়োগকর্তার হাতে জব্দ। তনখা যত মিলিবে বলিয়া তাহাকে দেশীয় দালাল আশ্বাস দিয়াছিলো, তাহার দশমাংশও মিলে না, খানা-বিছানা বাবদ টাকা কাটিয়া তাহার হাতে যা আসে তাহা দেশে পাঠানোর জন্য শহর অব্দি গমনের রাহাখরচার জন্যও যথেষ্ট নহে।

কিন্তু আবদুল জ্বলিয়া পুড়িয়া ছারখার হইলেও মস্তক নত করিবার নহে। সে ভেড়া চরাইতে চরাইতে ভেড়া হইতেও অধিক ভেড়ার ন্যায় জীবন কাটাইতে লাগিল।

কিন্তু তাহার বিধি বাসদের ন্যায় বাম। একদিন খোঁয়াড়ে একটি গড্ডলশিশুর হিসাবে গড়বড় হইয়া গেল। মালিক আসিয়া তদন্ত ঢুঁড়িয়া বাহির করিলেন, সুদূর উপত্যকায় কে বা কাহারা একটি গড্ডলশিশু জবেহ করিয়া বারবিকিউ সাঁটাইয়াছে। তিনি বেদুইনের জবানিতে একটি হ্রস্ব বক্তৃতা দিলেন, আবদুল তাহার বিন্দু বিসর্গও বুঝিল না। কিন্তু বক্তৃতা শেষে তিনি আবদুলের বামকর্ণটিই পাকড়াইয়া স্থানীয় কাজীর কাছে লইয়া গেলেন।

কাজী ঈশ্বরের কানুন ঘাঁটিয়া বলিলেন, ইহার একটি হস্ত কর্তন করা হৌক।

আবদুল কিছু বুঝিবার পূর্বেই তাহার একটি হস্ত ঈশ্বরের ইচ্ছায় কাটা পড়িল।

কিন্তু সকলই ললাটলিখন মনে করিয়া অবশিষ্ট হাতেই আবদুল ভেড়া চরাইতে লাগিল, আর ভাবিল, দেশে ফিরিবার জাহাজমাশুল যোগাড় করিতে পারিলে সে গৃহের সন্তান গৃহে ফিরিবে।

কিন্তু বাসদের ন্যায় বামাচারী বিধি পুনরায় আবদুলের উপর চড়াও হইল। নিয়োগকর্তার গৃহে জনৈকা পরিচারিকা গর্ভবতী হইয়া পড়িবার পর সে পুনরায় বাথানে আসিয়া বক্তিমা মারিল। তারপর আবদুলের কর্ণটি পুনরায় পাকড়াইয়া পূর্বোক্ত কাজীর নিকট তাহাকে দাখিল করিল।

কাজী ঈশ্বরের কানুন ঘাঁটিয়া বলিলেন, ইহার ডিংডংটি কর্তন করা হৌক।

আবদুল কিছু বুঝিবার পূর্বেই তাহার ডিংডং ঈশ্বরের অভিলাষানুগ কাটা পড়িল।

বিমর্ষ আবদুল তবুও দমিল না। তাহার যে হস্তটি ঈশ্বরের মর্জিতে কাটা পড়িয়াছিল, উহার সহিত বাল্যকাল হইতেই তাহার ডিংডঙের প্রণয়সম্পর্ক ছিল, তাই একের অনুপস্থিতি যে অপর বেশিকাল সহিবে না, ইহাতে আশ্চর্য কী? সে বিনা ডিংডঙেই ভেড়া চরাইতে লাগিল।

কিন্তু তাহার বিধি খালেকুজ্জামানকেও শরমিন্দা করিবার মত বাম, বাথানে জনৈক সিনাইবাসী দাস কাচ্চু খেলার ঝগড়ায় মারপিটে মারা পড়িল। নিয়োগকর্তা আসিয়া সোজা আবদুলকেই পাকড়াও করিলেন। আবদুল বিরক্ত মনে কাজীর দুয়ারে উপস্থিত হইল।

কাজী ঈশ্বরের কানুন ঘাঁটিয়া রায় দিলেন, ইহার মস্তকটি কর্তন করা হৌক।

নিয়োগকর্তা তখন কাশিয়া কহিল, হুজুর, ইহাতে আবার সম্পর্কে কোন প্রভাব পড়িবে না তো?

কাজী কিয়দক্ষণ ভাবিয়া কহিলেন, ইহার পোঁদটি কি অক্ষত আছে?

নিয়োগকর্তা আবদুলের তহবন নামাইয়া তাহার পোঁদ পরীক্ষা করিয়া কহিল, আছে হুজুর।

কাজী হাসিয়া কহিলেন, তাহলে সম্পর্কে কোনরূপ প্রভাব পড়িবে না।

No comments: