ঈশ্বর মঞ্চে বসিয়া বসিয়া বিরক্ত মুখে পাতি স্বর্গদূত নেতাদিগের বক্তৃতা শুনিতেছিলেন। ইহারা কর্মে পটু না হইলেও মুখের জোরে একেকটি গগ ও মাগগ। হাতের নাগালে মাইক ঠেকিলেই ইহারা অগ্রপশ্চাৎ জ্ঞান হারাইয়া আসুরিক শক্তিতে আর্তনাদ করিতে থাকে। মাইক ছাড়াই ইহাদের আওয়াজ সায়হুনের তীর হইতে ফোরাতের পূর্ব পার পর্যন্ত পৌঁছিবে। ইহারা খায় কী?
আন্দালিবিল নামক স্বর্গদূতটি সম্ভবত কোকেন টানিয়া আসিয়াছে, সে বুকের ছাতিতে কীল মারিতে মারিতে চেঁচাইতেছে, "মাননীয় ঈশ্বর, নির্বাচনে জয় লাভ করিলে আদমকে ধরিয়া বান্ধিয়া পোন্দাইতে হইবে, যেইরূপে সে আমাদিগকে বান্ধিয়া পোন্দাইবার ষড়যন্ত্র করিতেছে।"
ঈশ্বর দীর্ঘশ্বাস ফেলিলেন। ইহারা হইবে ভবিষ্যতের নেতা? শুধু পোন্দাপুন্দি করিবার দিকে ঝোঁক। এইসব বদভ্যাস ইহারা কোন স্থলে বসিয়া শিখিয়াছে কে জানে? স্বর্গেও যদি সদম উল্টাইতে হয়, ক্যাম্নেকী?
শরীক দলের আলবদরিল নামক এক নারকী নেতা মঞ্চে উঠিয়া হুহুঙ্কারে বলিল, "বিচার? কীসের বিচার? হিতাহিতের বিচার করেন কে? করেন হীরকরাজ! হুঁশিয়ার আদম, পোন্দানির হাত হইতে তোমার নিস্তার নাই!"
ঈশ্বর পুনরায় দীর্ঘশ্বাস ফেলিলেন। শরীক দলের বড়বড় নারকীগুলি আদমের আক্রমণে বন্দী হইয়াছে, কোনো এক নহরের পাশে তাহাদিগকে খর্জুরবৃক্ষের সহিত রজ্জুবদ্ধ করিয়া রাখিয়াছে হতভাগা আদম। সত্যই সে এইসব নারকীদিগকে পোন্দাইতেছে কি না, বলা শক্ত। কিন্তু নারকীরা দাবি করিতেছে, আদম তাহাদের নেতাদের পোন্দাইয়া কোন কিছু অবশিষ্ট রাখে নাই। ঈভের সংসর্গ না পাইয়া নাকি আদম বিগড়াইয়া গিয়াছে, সে আর বাছাবাছি করে না, নগদ যা পায় হাত পাতিয়া লয়। স্বর্গদূত নেতা ইলিয়াসিল সদমধ্বংসের ন্যায় আদমধ্বংসের দাবি জানাইয়া আসিতেছে বৎসরাধিক কালব্যাপী।
সকল পাতিনেতার বক্তৃতা শেষ হইবার পর ঈশ্বর মঞ্চে উঠিয়া ক্ষমতার খন্তাটি উঁচাইয়া ধরিতেই জনতা হর্ষধ্বনি করিয়া উঠিল। ঈশ্বর জেব হইতে আয়না বাহির করিয়া নিজের কবরীগ্রন্থিটি ঠিক করিলেন, অতঃপর একটি রশ্মিরোধী পরকলা পরিধান করিলেন। তাহার পর কহিলেন, "মা কসম ঠাকুর, আগামীবার ক্ষমতায় গিয়া ক্ষমতা নতুন নেতাদিগের হস্তে সমর্পণ করিব।"
উপস্থিত স্বর্গদূতেরা এই কথা শুনিয়া বিস্ময়ে বিমূঢ় হইয়া পড়িল। তাহারা নিজেদের কানে ফিসফাস করিতে লাগিল। ঈশ্বরের পরিবর্তে নতুন নেতার হাতে ক্ষমতা পড়িবে? আন্দালিবিল, আলবদরিলরা নন্দন কাননের মন্ত্রী হইবে? ইহারা ত পোন্দাপুন্দিকেই রাজনীতি মনে করে!
ঈশ্বর উপস্থিত স্বর্গদূতদের মনোভাব বুঝিয়া হস্তধৃত খন্তাটি পুনরায় উঁচাইয়া ধরিলেন। সভাস্থলে আবার পিনপতন নিস্তব্ধতা নামিল।
ঈশ্বর কহিলেন, "না, তোমরা দুশ্চিন্তা করিও না। আমি উপযুক্ত হস্তেই ক্ষমতা অর্পণ করিব।"
উপস্থিত স্বর্গজনতা উসখুস করিতে লাগিল।
ঈশ্বর গিবরিলকে ডাকিয়া বলিলেন, "যাও, বান্দরটিকে ফুলের মালা দিয়া বরণ করিয়া আন।"
গিবরিল মঞ্চের পিছন হইতে একটি গোদা বিবাগী শাখামৃগের কণ্ঠে বরণমাল্য পরাইয়া তাহাকে ক্রোড়ে করিয়া ফিরিল।
ঈশ্বর পরম স্নেহভরে ক্ষমতার খন্তাটি সেই বান্দরের হাতে তুলিয়া দিয়া নিজের আসনে ফিরিয়া গেলেন। রাজনীতি বড় পরিশ্রমের কর্ম, গৃহে ফিরিয়া জাকুজিতে এক ঘন্টা না কাটাইলেই নয়।
No comments:
Post a Comment