Sunday, November 05, 2006

পৌরাণিক ছাগুরাম



ছাগুরাম পুঁথি লিখিয়া সুবিধা করিতে পারে নাই৷ খুর দিয়া কয়লার পেন্সিল ধরা এক দুঃসাধ্য কর্ম, তদুপরি লিখিতে হয় ভূর্জপত্রে৷ ভূর্জপত্র ছাগুরাম ইতিপূর্বে কয়েকবার চিবাইয়া দেখিয়াছে, মন্দ নহে৷ তাহার উস্তাদ, শ্রদ্ধেয় মোদাররেস ব্যকরণ শিং বি এ তাহাকে বলিয়াছিলেন, "ছাগু! কোন জিনিস চাখিয়া দেখিতে ইতস্তত করিবে না৷ ইহা ছাগুসম্মত নহে৷ সঙ্কোচের বিহবলতা ছাগুরে অপমান৷"

তদ্যাবধি ছাগু যাহা হাতের নিকটে পায়, শিশিবোতলের মত শক্ত না হইলে চিবাইয়া দেখে৷ তাহার ফলাফল হইতেছে এ-ই, পুঁথির পাতা সে চিবাইয়া খাইয়া ফ্যালে৷ দোকানদার হাসে৷ কহে, "বিদ্যাচর্চা বস্তু খাইলে পেট ছাড়িবে৷ নগরীর চতুপর্াশ্বর্ে এত এত পনস বৃক্ষ, পানসপত্র খাইলেই তো হয়৷" ছাগুও হাসে মিটিমিটি৷ উস্তাদ ব্যকরণ শিং বি এ-র কথা কি সে একটা তালপাতার দোকানদারের ব্যঙ্গ শুনিয়া ফেলিয়া দিবে?

কিন্তু ভূর্জপত্র লোপাট করিবার ফলে ছাগুরামের ব্যাপক সমস্যা হয় লিখিতে৷ কী করিবে সে? প্রস্তরের গায়ে লিখিবে? কিন্তু প্রস্তরখন্ড আলগাইবে কীরূপে? তাছাড়া এই যুগে প্রস্তরখন্ডে লিখিলে তাহার আইআরসি চ্যাটরুমের ছাগীবান্ধবীরা ওলান আন্দোলিত করিয়া হাসিয়া উঠিবে৷ কী দরকার৷ যেই যুগে যেই হাইপ৷

একদিন ছাগুরামের এক নেটবান্ধব ওয়ারাম আসিয়া কহিলো, "ছাগু ভাই, শান্তি বর্ষিত হোক৷ শুনিলাম লিখিতে তোমার সমস্যা হইতেছে?"

ছাগু বলিলো, "ম্যাঅ্যা ... মানে হ্যাঁ! কী করা যায় বলো তো?"

ওয়ারাম বলিলো, "নরডেট 28 ব্যবহার করিয়া দেখিয়াছো?"

ছাগু চটিয়া বলিলো, "ছাগেশ্বরের কসম, তুমি কি মশকরা মারিতেছো আমার সহিত?"

ওয়ারাম লজ্জিত হইয়া বলিলো, "দুঃখিত, ভুল উইন্ডোতে লিখিয়া ফেলিয়াছি৷ মস্তইয়ের সাথেও আলাপ চলিতেছে কি না ... সে যাহাই হউক, তুমি লাদি মিডিয়ামে লেখো না কেন?"

ছাগু ভ্যাবাচ্যাকা খাইয়া বলিলো, "লাদি মিডিয়াম? উহা কী? ম্লেচ্ছ মিডিয়ামে পড়াশোনা করিয়াছি কিয়ত্‍কাল, লাদি মিডিয়াম তো শুনি নাই!"

ওয়া কহিলো, "আরে, তুমি তো ভূর্জপত্র দেখিলে নোলা সামলাইতে পারো না, খাইয়া ফ্যালো৷ তাই তোমাকে লিখিতে হবে লাদির হরফে৷ এই বিপুলা ধরণী হইবে তোমার খাতা৷ লাদি ছাড়িবার সময় হোগাটিকে সুচারুরূপে নিয়ন্ত্রণ করিতে পারিলেই তুমি অক্ষর নির্মাণ করিতে পারিবে৷ আর কতকাল খুর দিয়া কয়লার পেন্সিল আঁকড়াইয়া লিখিবে? এখন লাদিলিপির বড়ই গরমাবস্থা৷ মহাদেশে মহাদেশে জ্ঞানী-বুজর্গ লোকে লিখিতেছে৷ তুমিও লেখো৷"

ছাগুরামের বড়ই মনে ধরিলো কথাটি৷ সত্যই তো৷ ইহাতে ঝামেলা কম৷ সমস্ত দিনই তো সে এই পত্র সেই পত্র খাইয়া লাদিয়া বেড়ায় স্থানে স্থানে৷ সেই লাদি ধারাকে যদি একটু সামলাইয়া দেয়া যায়, তাহা হইলেই তো মাটিতে হরফ ফুটিয়া উঠিবে৷ তাছাড়া সেই হরফে কেউ হাত দিবে না, কারণ উহা ময়লা বস্তু৷ তাহার লেখা অজরামর হইয়া থাকিবে পৃথিবীর বুকে৷

ছাগুরাম হর্ষভরে ম্যাত্‍কার করিয়া তত্‍ক্ষণাত্‍ রওয়ানা দিলো নিকটস্থ একটি পনসবৃক্ষের দিকে৷ আজ সে পেটটি পুরিয়া পাতা খাইবে৷ তারপর একটি মনোজ্ঞ প্রবন্ধ রচনা করিবে লাদির আঁখরে৷


মাস দুই এইভাবে লাদিলিপিচর্চা করিবার পর ছাগুরাম প্রথম বাধার সম্মুখীন হইলো৷ তাহার নিয়মিত লাদিচর্চার ময়দানের পাশে একটি পাঠশালা গড়িয়া উঠিয়াছে, নাম অল্প বিদ্যা ভয়ঙ্করী৷ সেই পাঠশালায় কতিপয় নাস্তিক বালকবালিকা লেখাপড়ার নামে অনর্থ করে৷ তাহারা ছাগুরামের লাদিরচনা নিয়া ব্যঙ্গ করে, হাসে৷ ছাগুরামের গা জ্বলিয়া যায়৷ গুগল সার্চ দিয়া সে কত কত জ্ঞানের কথাকে ময়দানপটে লাদিলেখায় আঁকিয়া তুলিয়াছিলো, সেইগুলি নিয়া সেই নাস্তিকের দল হাসিয়া মজা লোটে৷

ছাগুরাম মাঝে মাঝে উহাদের বুঝাইতে যায়৷ তাহারা ছাগুকে সমাদর করিয়া বসায়৷ ছাগুরাম গম্ভীর মুখে অনেক কিছু বলে, তাহারা মিটিমিটি হাসে৷ কিন্তু শুধরায় না৷ বরং মাঝে মাঝে ছাগুরামের নাম নিয়া ব্যঙ্গ করে৷ তাহার একটি পা নাই, তিনটি পা নিয়া সে এত কঠিন কর্মে হাত দিয়াছে, এ নিয়াও ব্যঙ্গ করে তাহারা৷ রাগে ছাগুরামের শিঙের গোড়া উত্তপ্ত হইয়া ওঠে৷ সে পণ করে, পরশুরামের মতো সে-ও একদিন পর পর একুশবার পৃথিবী নাস্তিকশূন্য করিয়া ছাড়িবে৷ সে তো আর কুঠার ধরিতে পারিবে না, তাহার অস্ত্র হইবে লাদি৷ মারাত্মক দুর্গন্ধযুক্ত লাদি৷

কী খাইলে ঐরূপ লাদি সে ছাড়িতে পারিবে? সে নেটে ওয়ারামকে শুধায়৷

ওয়ারাম বলে, "নরডেট 28 ব্যবহার করিয়া দেখিয়াছো?"

ছাগু প্রচন্ড চটিয়া যায়, ওয়ারাম লজ্জিত হইয়া সাফাই গায়, কহে, মস্তইয়ে আছে আরেক উইন্ডোতে, দুঃখিত, ভুল জায়গায় লিখিয়া ফেলিয়াছে৷ তাহার পর সে চুপিচুপি পরামর্শ দেয়৷ বলে, যাও, হাটবারে হাটে গিয়া মৌদুধি সাহেবের পবিত্রগ্রন্থটি হাতসাফাই করিয়া লইয়া আসো৷ তাহার পর উহা উত্তমরূপে গলাধঃকরণ করো৷ ইহার পরদিন সকাল হইতে তোমার যা লাদি বাহির হইবে, উহার দুর্গন্ধের তুলনা পৃথিবীতে নাই৷

ছাগুরাম খুশি হইয়া ওঠে৷ ওয়া বড় কাজের পরামর্শ দিয়া থাকে৷

সে স্বপ্ন দেখিতে থাকে৷ মৌদুধির গ্রন্থজাত লাদির গন্ধে ঐ অল্পবিদ্যাভয়ঙ্করী ইশকুলের নাস্তিকগণ ছটফটাইয়া মরিতেছে৷ একবার, দুইবার করিয়া একুশবার৷ ভবিষ্যত্‍ প্রজন্ম তাহাকে আসিয়া পল্টন ময়দানে দাঁড়া করাইয়া পরিচয় করাইয়া দিতেছে, আজ হইতে ছাগুরামকে লোকে জানিবে লাদুরাম বলিয়া ...!

ছাগুরাম ঘুমের ঘোরেও ম্যাঅ্যাঅ্যা করিয়া ওঠে৷


No comments: