Saturday, March 03, 2007

ভোদাইচরিতমানস ০৪

কাশি সারিতেছিলো না৷ দিনরাত খকর খকর করিতেছিলাম৷

কাশির জন্য আশেপাশের দূষিত বায়ুকে দায়ী করিতে মন চাহে, তবে ডাক্তার বন্ধুরা দোষ চাপাইতে চায় আমার নিরীহ ফুসফুসের স্কন্ধে৷

জনৈক ডাক্তার বন্ধু দীর্ঘ নয় বছর যাবত্‍ আমার চিকিত্‍সা করিয়াছে, তাহার চিকিত্‍সার পদ্ধতিতে আমার আগাগোড়াই আপত্তি জারি ছিলো, কিন্তু তাহার স্বভাবটি বড়ই স্বৈর, রোগীর প্রতিবাদ কানে নিতে চাহে না, তাহার অ্যালোপ্যাথি ওষুধ খাইতে খাইতে খাইতে খাইতে একদিন হঠাত্‍ রুষিয়া উঠিয়া কহিলাম, তোমার কাছে আবার যদি এই কাশি লইয়া দেখাইতে আসি তো আমার মুখে জুতা!

বলিয়া উঠিয়া আসিলাম৷ বন্ধু হাঁ হাঁ করিয়া উঠিয়া আসিলো, পাত্তা দিলাম না৷

তাহার পর পনেরো বছর কাটাইয়া দিলাম এই কাশি লইয়া৷ ইহার মধ্যে প্রথম পাঁচ বছর দেখাইলাম পাড়ার কবিরাজকে, তিনি খালি কোকিলের ডিমের সহিত মাড়িয়া মকরধ্বজ খাইতে বলিতেন, বলিতেন যে ইহা নাকি জনৈক শহীদ কবিরাজের স্বপ্নে প্রাপ্ত মহৌষধ, খাইলেই কাশি দূর হইবে, গলা তথা ফুসফুসের উন্নয়ন ঘটিবে৷ বহুমূল্য মকরধ্বজ যোগাড় করিয়াছিলাম বহুকষ্টে, কিন্তু কোকিলের ডিম যোগাড়ের টেন্ডার যাহাদিগের স্কন্ধে অর্পিত করিয়াছিলাম, তাহার বড়ই জুয়াচোর৷ প্রথম জন যে এক হালি আন্ডা ঠোঙায় করিয়া আনিয়া দিলো, উহাদের দেখিয়া নিতান্ত বোকা*োদাও বুঝিবে, উহারা কোকিলের নহে, বরং মুরগির আন্ডা৷ কোন হংসীর গর্ভচু্যত রত্নও হইতে পারে৷

দালালটিকে চোখ রাঙাইয়া কহিলাম, এয়ার্কি পাইয়াছো? কোকিলের ডিম অত বৃহত্‍ হয় নাকি? সে হাসিয়া কহিলো, এ তো রামকোকিলের ডিম কর্তা৷ একটু বড়সড় হবেই৷ মকরধ্বজ দিয়া মাড়িয়া ঢক করিয়া গিলিয়া ফেলুন৷ আর বিলটা কি এখন দেবেন না দশ মিনিট বসিবো?

রাগে তালু জ্বলিয়া গেলো, কিন্তু ভদ্রলোকের সন্তান হইয়া এই বাটপারটির সহিত কলহে জড়াইতে মন সায় দিলো না৷

পয়সা লইয়া সে ফুটিতে না ফুটিতেই আরেক দালাল আসিয়া হাজির, হাতে একটি সরু হোমিওপ্যাথির শিশি৷ তাহাতে কয়েকটি সাদা ক্ষুদ্রাকৃতির বস্তু৷

সংশয় প্রকাশ করিতে না করিতে জ্ঞাত হইলাম, ইহা দুষ্প্রাপ্য পোনাকোকিলের ডিম৷ অবিলম্বে যাহাতে মকরধ্বজ দিয়া মাড়িয়া খাইয়া কাশিদূর করি, আর টাকা চুকাইয়া দিয়া তাহাকে দূর হওয়ার অনুমতি প্রদান করি৷

বিনাবাক্যে তাহাই করিলাম৷ তবে প্রথম চারটি ডিম ধানুকে দিয়া বলিলাম অমলেট আঁটিতে, আর শিশিটি ফেলিয়া দিলাম৷ টিকটিকির ডিম আমি বিলক্ষণ চিনি৷

তবে কাশি সারিলো না, জাতীয় পক্ষীর ডিমের সন্ধানে পাগলপারা হইয়া ঘুরিতেছি, এমন সময় একদিন আমার আরেক হোমিওপ্যাথ বন্ধু আসিয়া কহিলো সহাস্যে, শুনিলাম শিয়ালের তেল সন্ধান করিতেছো?

গুজবের কাঁটা সজারুস্য অপেক্ষা শক্ত, ছাড়াইবার চেষ্টায় গলদঘর্ম হইয়া অবশেষে সব খুলিয়া কহিলাম৷ বন্ধুটি ক্ষিপ্ত হইয়া কহিলো, বাটপারটা এদানি ং এই ব্যবসা ধরিয়াছে? কোকিলের ডিম দিয়া মাড়িয়া মকরধ্বজ? তুমি পরশুরামের কচি সংসদ পড় নাই? ঐখানে লালিমা পাল পুং ইহা সেবন করিতো! বাটপারটা তোমাকে ধোঁকা দিয়া মকরধ্বজ বেচিতেছে৷ আর খোঁজ নিলে দেখিবে ঐ ডিমের দালাল সব উহার শালাসম্বুন্ধী৷

খোঁজ নিয়া দেখিলাম, বাস্তবিক তা-ই!

মন বিষাইয়া গেলো, কাশি লাঘবের ভার অর্পণ করিলাম হোমিওপ্যাথটির উপর৷

সে আমাকে নাক্স ভমিকা আর আর্নিকা থার্টি গছাইয়া দিয়া নানা আব্দার চালাইতে লাগিলো৷ হোমিওপ্যাথি ওষুধ নাকি মারাত্মক আচারবিধি পালন করিয়া খাইতে হয়৷ নাহলে কাজ দেয় না৷ আচার বিধির বেশিরভাগই খরচিয়া, আর দেখিলাম তাহার মধ্যে সেই বন্ধুটিকে ঘন ঘন দাওয়াত করিয়া খাওয়াইবার আচারটিই মুখ্য৷ একরত্তি ওষুধ খাইবার নিমিত্তে হাজারটাকা বাহির হইতে লাগিলো৷

পাঁচটি বছর এইরূপে কাটিলো৷

আমার কবিরাজ বন্ধুটি আমাকে হোমিওপ্যাথির কবল হইতে রক্ষা করিলেন৷ আসিয়া কহিলেন, কোকিলের উপর রাগ করিয়া ওষুধ বন্ধ করিলে কি চলিবে? কোন কোকিলের রন্ধ্র যদি অনেক বড় বা অনেক ছোট হইয়া থাকে, তোমার আমার কি কিছু করিবার আছে? রন্ধ্র বড় হইলে ডিমও বড় হইবে৷ রন্ধ্র ছোট হইলে ডিমও ছোট হইবে৷ তাই বলিয়া তুমি তাহাকে মুরগি বলিবে? টিকটিকি বলিবে? তাহা হইলে তো শ্রীদেবীকে গাভী বলিতে হয়৷ এইসব রাখিয়া বরং ফুসফুসের কিছু উন্নয়ন করো৷ উন্নয়নের জোয়ার৷

লজ্জা পাইলাম৷ কাশিয়া কহিলাম, হোমিওপ্যাথ বেটা বড় নচ্ছাড়৷ তুমিই অন্য কোন ওষুধটষুধ দাও৷ তবে পুনশ্চে যোগ করিলাম বিশেষ শ্রাব্য হিসাবে, কোকিলের ডিম আর নয়৷

বন্ধুটি বড়ই উদার, এইবার প্রেসক্রাইব করিলেন পদ্মমধু দিয়া মাড়িয়া ডুমুরের ফুল৷

আমার তো কালঘাম ছুটিয়া গেলো পদ্মমধু যোগাড় করিতে গিয়া৷ মৌমাছিরা সরিষা ফেলিয়া পদ্ম হইতে কেন মধু সংগ্রহ কওে কে জানে৷ তবে দেশেও পদ্মের আকাল৷ জনৈক কুবের মাঝির নিকট হইতে মধু যোগাড় করিয়া বয়ামে ভরিয়া ফ্রিজে রাখিয়া দিলাম বটে, কিন্তু ডুমুরের ফুল খুঁজিতে গিয়া পরনের গামছা বিকাইয়া যাওয়ার যোগাড় হইলো৷ পূর্বপরিচিত দালালেরা আগাম পয়সা লইয়া নানারকম ফুল আনিয়া দিলো৷ সেগুলির মধ্যে কুমড়ার ফুল আর গোলাপ শনাক্ত করিতে পারিলাম, বাকিগুলি ধানু ভাসে সাজাইয়া রাখিলো৷

এইরূপে পাঁচ বছর গুজরান হইতে না হইতে হোমিওপ্যাথ বন্ধুটি আসিয়া কহিলেন, তুমি তো আচ্ছা সাহিত্যমূর্খ হে৷ পরশুরামের কচি সংসদে পদ্মমধু বোসের কথা পড় নাই? কবিরাজ ব্যাটা ভোগা দিয়া তোমাকে লুটিয়া ল্যাংটা করিলো!

কী আর কহিবো৷ বিষণ্ন বদনে বসিয়া কাশিতে লাগিলাম৷

আমাকে তখন উদ্ধার করিতে আসিলো ভোদাই৷

ঘাতে একটি বয়াম লইয়া আসিয়া হাসিয়া কহিলো, এই লও৷ ইউনুনি ওষুধ৷ খাইলেই কাশি দূর৷ দেহে থাকবে লাবণ্য৷ মনে থাকবে আনন্দ৷

বয়ামটি হাতে লইয়া নাম দেখিলাম৷ ওষুধের নাম শক্তি, প্রস্তুত কারক বিউটেনুস৷

নাক সিঁটকাইয়া কহিলাম, বিউটেনুস! ইহা কেমন নাম? লাতিন নাকি?

ভোদাই হাসিয়া কহিলো, কী জানি বাপু৷ বলিয়া পকেট হইতে একটি ক্ষুদ্র ঠোঙা বাহির করিয়া কহিলো, অনুপান আছে৷ শুধু শুধু খাইলে কাশি সারিবে না৷ অনুপান সাথে খাইতে হইবে৷

ঠোঙা খুলিয়া দেখি ভিতরে গোটা কতক জলপাই৷

মূল্যের কথা শুধাইতে ভোদাই হাসিয়া কহিলো,আহা অত তাড়াহুড়ার কী আছে? মূল্য ধীরেসুস্থে সারাটি জীবন ধরিয়া দিও!

2 comments:

ইরতেজা আলী said...

হে হে হে।।অনেক দিন পরে এই রকম সাধু ভাষায় একটা ব্লগ পড়লাম । খুব ভালো লাগছে। মজাও লাগছে। মনে হয়েছে কন বই পড়ছি।

বরফ পানি said...

তাহার পর কী হইলো? কাশি কি সারিলো? সম্প্রতি একটি টোটকাতে আমার নিজের সর্দিকাশিরোগ বহুলাংশে আরোগ্য হইয়াছে, দুই টেবিল চামচ মধু গরম করিয়া তাহাতে লেবুর রস দিয়া প্রত্যহ দুইবার, সকালে এবং সন্ধ্যায় সেবন করিতে হইবে। ইউনানি চিকিৎসায় আশানুরূপ ফললাভ না হইয়া থাকিলে এইটি চেষ্টা করিয়া দেখিতে পারেন।

আমার ধারণা ছিলো আজকাল আর কেহ সাধু ভাষায় সাহিত্য চর্চা করেনা। আপনার ব্লগ পড়িয়া সেই ভুল ধারণা দূরীভুত হইলো। আপনার প্রথম লেখাটি পড়িয়াই এতো প্রচুর পরিমাণে আনন্দ লাভ করিয়াছি এবং হাসিয়াছি যে মন্তব্য না লিখিয়া থাকিতে পারিলাম না। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। :)