প্রাচীন পুঁথিটুঁথি ঘাঁটিবার শখ আমার তেমন নাই। উহাতে প্রচুর ধূলা উড়ে, নাকে ধূলা ঢুকিলে আমার সর্দি হয়। পুঁথি মাত্রাতিরিক্ত প্রাচীন হইলে নিজেই চূর্ণবিচূর্ণ হইয়া ধূলার হাত ধরিয়া বাটী হইতে পলায়ন করে।
সেদিন শুনিলাম প্রাচীন আর্যাবর্তে মুনিঋষিদের বেয়াড়া সন্তানদের নিমিত্ত এক বিচিত্র প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু ছিল। তাহারা পিতৃপিতৃব্যদের বারণনিষেধ প্রায়ই অমান্য করিত এবং ঋষিকন্যাদের লইয়া আহ্লাদ করিয়া সময় অপচয় করিত। ফলশ্রুতিতে শাস্ত্রশিক্ষা ও গোচারণে ব্যাঘাত ঘটিতো, ন্যায়শাস্ত্র হটাইয়া তাহারা বাৎস্যায়ন গুপ্তের কামশাস্ত্রের পাৎলা সংস্করণগুলি শিক্ষা করিত অধিক, আর মনোযোগের অভাবে গোবৎস্যগুলি গাভীর সমুদয় দুধ শোষণ করিয়া বাঁট শুষ্ক বানাইয়া রাখিতো। ডিনারে ক্ষীরের অভাবে মুনিঋষিরা ভুগিতেন, এবং স্বীয় পুত্রদের বরাহশাবক বলিয়া মাঝে মাঝে মুখ ফসকাইয়া ডাকিয়া বসিতেন।
হেন বেলেহাজ পুত্রদের শৃঙ্খলাশিক্ষার নিমিত্ত ঋষি কমুন্ডু একখানি শাস্ত্র রচনা করেন, যাহার মূল সংস্কৃত নামটি আমার ঠিক ইয়াদ আসিতেছে না, কিন্তু বঙ্গানুবাদ করিলে "ব্যাদড়া বালক বশীকরণ" গোছের কিছু একটা দাঁড়ায়। কমুন্ডুর এই শাস্ত্র তৎকালীন ব্যাদড়া বালকের পিতা যেসব ঋষি ছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়, এবং তাঁহারা দলে দলে তাঁহাদের পুত্রদের কমুন্ডুর আস্তানায় গিয়া ভর্তি করিয়া দিয়া আসিতেন।
কমুন্ডুর প্রশিক্ষণ আর কিছু্ই নহে, মারিয়া ভূত বিতাড়ন। তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের একেবারে রগে রগে শিক্ষা দিয়া ছাড়িতেন। সূর্যোদয়ের পূর্বেই তিনি একখানি খর্জুরবৃক্ষের ডাল লইয়া ঘুমন্ত বালকদের পশ্চাদ্দেশে ভালো করিয়া প্রয়োগ করিয়া আসিতেন। প্রহারের চোটে বালকেরা "বাপ" "বাপ" বলিয়া চিৎকার করিতে করিতে কমুন্ডুর উঠানে আসিয়া সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইত। কমুন্ডু বলিতেন, "কীসের বাপ? আমিই তোদের বাপ!" ফলে অচিরেই তাহারা বাপোদ্ধনি ত্যাজিয়া "কমুন্ডু" "কমুন্ডু" বলিয়া তারস্বরে চিৎকার করিতে করিতে যা করিবার করিত।
সেই উঠানে সমাবেত হইবার পর হইতেই ঋষিদের বেয়াড়া পুত্রদের কঠোর দৌড়ের উপর থাকিতে হইত। তাহারা কখনও পৃষ্ঠে একমণ ওজনের লাকড়ি বহন করিয়া মূহুর্তের এক তৃতীয়াংশ সময়ের মধ্যে বন্ধুর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিত, কখনও উঁচু গাছের ডাল হইতে নিম্নে পুষ্করিণীতে ঝাঁপাইয়া পড়িত। আর কোন উপায়ে তাহাদের নাজেহাল করিতে না পারিলে কমুন্ডু তাহাদের দিয়া ডনবৈঠক খেলাইতেন। কেহ প্রতিবাদের সাহস করিত না, প্রতিবাদ করিলেই কমুন্ডু প্যাঁদাইতেন বিস্তর।
কালে কমুন্ডুর আস্তানায় এইসব শারীরিক শাস্তি ভোগ করিয়া করিয়া ঋষিদের পুত্রগণ কঠোর শৃঙ্খলা শিক্ষা করিতে শুরু করিল। তাহারা যথোচিত আদবে শিক্ষিত হইয়াছে, এমনটি প্রতীয়মান হইলে কমুন্ডু একটি সুপক্ক ওল ও কিছু বাঘা তিন্তিড়ি সহযোগে তাহাদের নিজ গৃহে প্রেরণ করিতেন। সেখানে ফিরিয়া তাহারা কঠোর শৃঙ্খলার সাথে জীবন যাপন করিত। শুধু তাহাই নহে, প্রতিবেশী-স্বজন-পথচারী কেহ বিশৃঙ্খলা প্রদর্শন করিলে তাহাদের ধরিয়া গুরু কমু্ন্ডুর আদলেই শৃ্ঙ্খলা শিক্ষাদানে প্রবৃত্ত হইত।
এই কাহিনী শুনিয়া মনে হইল, মন্দ নহে। আমাদের সমাজে সর্বস্তরে কমুন্ডু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজন। গৃহের পরিচারক, পথের রিকশাচালক, তাম্বুলবিক্রেতা, তস্করলুণ্ঠক, আমলামন্ত্রী, সকলকেই কমুন্ডু প্রশিক্ষণ দান করিতে হবে। চৌদ্দ কোটি মানুষকেই কমুন্ডু প্রশিক্ষণের আওতায় আনিতে হইবে। কেবল তখনই দেশের তাবৎ সমস্যার সমাধান হইবে, চালডালের মূল্য হ্রাস পাইবে, মশামাছির উপদ্রব থাকিবেনা, নায়িকা ময়ূরীকেও তখন দেখিলে ভালো লাগিবে।
সেদিন শুনিলাম প্রাচীন আর্যাবর্তে মুনিঋষিদের বেয়াড়া সন্তানদের নিমিত্ত এক বিচিত্র প্রশিক্ষণব্যবস্থা চালু ছিল। তাহারা পিতৃপিতৃব্যদের বারণনিষেধ প্রায়ই অমান্য করিত এবং ঋষিকন্যাদের লইয়া আহ্লাদ করিয়া সময় অপচয় করিত। ফলশ্রুতিতে শাস্ত্রশিক্ষা ও গোচারণে ব্যাঘাত ঘটিতো, ন্যায়শাস্ত্র হটাইয়া তাহারা বাৎস্যায়ন গুপ্তের কামশাস্ত্রের পাৎলা সংস্করণগুলি শিক্ষা করিত অধিক, আর মনোযোগের অভাবে গোবৎস্যগুলি গাভীর সমুদয় দুধ শোষণ করিয়া বাঁট শুষ্ক বানাইয়া রাখিতো। ডিনারে ক্ষীরের অভাবে মুনিঋষিরা ভুগিতেন, এবং স্বীয় পুত্রদের বরাহশাবক বলিয়া মাঝে মাঝে মুখ ফসকাইয়া ডাকিয়া বসিতেন।
হেন বেলেহাজ পুত্রদের শৃঙ্খলাশিক্ষার নিমিত্ত ঋষি কমুন্ডু একখানি শাস্ত্র রচনা করেন, যাহার মূল সংস্কৃত নামটি আমার ঠিক ইয়াদ আসিতেছে না, কিন্তু বঙ্গানুবাদ করিলে "ব্যাদড়া বালক বশীকরণ" গোছের কিছু একটা দাঁড়ায়। কমুন্ডুর এই শাস্ত্র তৎকালীন ব্যাদড়া বালকের পিতা যেসব ঋষি ছিলেন, তাঁহাদের মধ্যে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়, এবং তাঁহারা দলে দলে তাঁহাদের পুত্রদের কমুন্ডুর আস্তানায় গিয়া ভর্তি করিয়া দিয়া আসিতেন।
কমুন্ডুর প্রশিক্ষণ আর কিছু্ই নহে, মারিয়া ভূত বিতাড়ন। তিনি তাঁর শিক্ষার্থীদের একেবারে রগে রগে শিক্ষা দিয়া ছাড়িতেন। সূর্যোদয়ের পূর্বেই তিনি একখানি খর্জুরবৃক্ষের ডাল লইয়া ঘুমন্ত বালকদের পশ্চাদ্দেশে ভালো করিয়া প্রয়োগ করিয়া আসিতেন। প্রহারের চোটে বালকেরা "বাপ" "বাপ" বলিয়া চিৎকার করিতে করিতে কমুন্ডুর উঠানে আসিয়া সারিবদ্ধ হইয়া দাঁড়াইত। কমুন্ডু বলিতেন, "কীসের বাপ? আমিই তোদের বাপ!" ফলে অচিরেই তাহারা বাপোদ্ধনি ত্যাজিয়া "কমুন্ডু" "কমুন্ডু" বলিয়া তারস্বরে চিৎকার করিতে করিতে যা করিবার করিত।
সেই উঠানে সমাবেত হইবার পর হইতেই ঋষিদের বেয়াড়া পুত্রদের কঠোর দৌড়ের উপর থাকিতে হইত। তাহারা কখনও পৃষ্ঠে একমণ ওজনের লাকড়ি বহন করিয়া মূহুর্তের এক তৃতীয়াংশ সময়ের মধ্যে বন্ধুর পাহাড়ি পথ পাড়ি দিত, কখনও উঁচু গাছের ডাল হইতে নিম্নে পুষ্করিণীতে ঝাঁপাইয়া পড়িত। আর কোন উপায়ে তাহাদের নাজেহাল করিতে না পারিলে কমুন্ডু তাহাদের দিয়া ডনবৈঠক খেলাইতেন। কেহ প্রতিবাদের সাহস করিত না, প্রতিবাদ করিলেই কমুন্ডু প্যাঁদাইতেন বিস্তর।
কালে কমুন্ডুর আস্তানায় এইসব শারীরিক শাস্তি ভোগ করিয়া করিয়া ঋষিদের পুত্রগণ কঠোর শৃঙ্খলা শিক্ষা করিতে শুরু করিল। তাহারা যথোচিত আদবে শিক্ষিত হইয়াছে, এমনটি প্রতীয়মান হইলে কমুন্ডু একটি সুপক্ক ওল ও কিছু বাঘা তিন্তিড়ি সহযোগে তাহাদের নিজ গৃহে প্রেরণ করিতেন। সেখানে ফিরিয়া তাহারা কঠোর শৃঙ্খলার সাথে জীবন যাপন করিত। শুধু তাহাই নহে, প্রতিবেশী-স্বজন-পথচারী কেহ বিশৃঙ্খলা প্রদর্শন করিলে তাহাদের ধরিয়া গুরু কমু্ন্ডুর আদলেই শৃ্ঙ্খলা শিক্ষাদানে প্রবৃত্ত হইত।
এই কাহিনী শুনিয়া মনে হইল, মন্দ নহে। আমাদের সমাজে সর্বস্তরে কমুন্ডু প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা প্রবর্তনের প্রয়োজন। গৃহের পরিচারক, পথের রিকশাচালক, তাম্বুলবিক্রেতা, তস্করলুণ্ঠক, আমলামন্ত্রী, সকলকেই কমুন্ডু প্রশিক্ষণ দান করিতে হবে। চৌদ্দ কোটি মানুষকেই কমুন্ডু প্রশিক্ষণের আওতায় আনিতে হইবে। কেবল তখনই দেশের তাবৎ সমস্যার সমাধান হইবে, চালডালের মূল্য হ্রাস পাইবে, মশামাছির উপদ্রব থাকিবেনা, নায়িকা ময়ূরীকেও তখন দেখিলে ভালো লাগিবে।
No comments:
Post a Comment