Friday, April 04, 2008

ভোদাইচরিতমানস ০৫

চালের দাম অগ্নিমূল্য হইবার পর হইতে আহারেবিহারে কিঞ্চিৎ সংবরণের পন্থা অবলম্বন করিয়াছি। প্রাতরাশে একটি কলা খাই এক টুকরা রুটি অবলম্বন করিয়া। পূর্বকালে দ্বিপ্রহরে থালে দ্বিতল ভাতের অট্টালিকা বানাইয়া মধ্যে একটি ঝোলের পুষ্করিণী বানাইয়া ভালোমতো মাখাইয়াজোকাইয়া আহার করিতাম, ঝোলের চিহ্ন কব্জি স্পর্শ করিতো, এখন ভাতের উচ্চতা অতিক্রম করিয়া ঝোল পাতের কিনারা স্পর্শ করে, উপর হইতে দেখিতে অনেকখানি জলোচ্ছ্বাসাক্রান্ত উড়ির চরের মতো লাগে দেখিতে। রাত্রিকালে দুইটি হাতে গড়া রুটি উত্তমরূপে শুঁকিয়া প্রাণপণে চর্বণপূর্বক গিলিয়া ফেলি। ঘ্রাণম অর্ধনম ভোজনম সূত্রানুসারে তিনটি রুটি আহার করা হয় তাহাতে।

ভোদাই একদিন এক টুকরা কেক খাইতে খাইতে আসিয়া কহিলো, "সে কী! ভাত খাইতেছ! তুমি কি মনুষ্য?"

আমি কোঁৎ করিয়া ভাতের লোকমাটি গিলিয়া কহিলাম, "ক্যানো হে, বাঙালির সন্তান হইয়া ভাত খাইবো না তো কী খাইবো?"

ভোদাই পকেট হইতে একটি নিউজপ্রিন্টের টুকরা বাহির করিয়া কহিলো, "আলু খাইতে হইবে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালিকে আলু খাইতে হইবে।"

আমি নিউজপ্রিন্টের টুকরাটি টানিয়া লইয়া পাঠ করিয়া দেখিলাম, কে এক কুলাঙ্গার কহিতেছে, ভাতের উপর হইতে চাপ কমাইবার উপলক্ষে সকলকে বেশি করিয়া আলু খাইতে হইবে।

এক গেলাস জলের সহিত যথাপরিমাণ থতমত খাইয়া কহিলাম, "বেশ। আজ হইতে আলুই খাইব।"

দেখিতে দেখিতে আলুর বাজারেও অগ্নিসংযোগ করিলো কে যেন। ধানু নিক্তিতে মাপিয়া দুইশো গ্রাম আলু সুসিদ্ধ করিয়া পাতে দিতে লাগিলো। শৈশব হইতে ভাত ভোজন করিয়া বড়টি হইয়াছি, আলু সিদ্ধ হইলে কী হইবে, রীতিমতো গলায় ঠেকিতে লাগিলো।

ভোদাই একদিন এক টুকরা তরমুজ চিবাইতে চিবাইতে আসিয়া আমাকে আলু ভক্ষণরত অবস্থায় দেখিয়া নভোমন্ডল হইতে ভূপাতিত হইলো। সে কহিলো, "তুমি তো আচ্ছা দুরাচার হে! আলু খাইতেছ!"

আমি ক্রোধ সংবরণ করিয়া কহিলাম, "ওহে লিঙ্গপুত্র, তুমিই তো কিয়দকাল পূর্বে আমার পাত হইতে ভাত হঠাইয়া আলু চালু করিয়া দিয়া গেলে! আজ তুমিই আলুর দোষ ধরিতেছ?"

ভোদাই পকেট হইতে পূর্বানুরূপ একটি নিউজপ্রিন্ট কাগজ বাহির করিয়া কহিলো, "ভূট্টা খাইতে হইবে। প্রতিটি দেশপ্রেমিক বাঙালিকে আজ ভুট্টা খাইতে হইবে।"

আমি বিরসবদনে কহিলাম, "ভুট্টা তো বায়োস্কোপদর্শনের পাশাপাশি পূর্বে বিলক্ষন খাইতাম। এখন তো বায়োস্কোপ দেখার পয়সা নাই।"

ভোদাই কহিলো, "বিনা বায়োস্কোপেই খাও। আমি শুনিয়াছি ধনী লোকে এখন বায়োস্কোপ দেখিবার পাশাপাশি ভাত খায়।"

আলু ছাড়িয়া ভুট্টার দানা ধরিলাম। ধারণা করিয়াছিলাম, মুরগীর খাবার, অতটা শক্ত হইবে না, কিন্তু কয়েকদিন খাইবার পর বুঝিলাম, মুরগীকে তাহার ক্ষুদ্র জীবনে কত অত্যাচার সহ্য করিতে হয়।

ভোদাই কিন্তু ছাড়িলো না। কখনো আমড়া, কখনো ডাবলি মটর চিবাইতে চিবাইতে আসিয়া একে একে আমাকে জোয়ার, বাজরা, সর্গুম ... সবই খাওয়াইয়া গেলো। দেশপ্রেমের চাপে পড়িয়া খাইলাম সকলই।

অতঃপর একদিন ভোদাই আইসক্রীম চাটিতে চাটিতে আসিয়া উপস্থিত। আমি সর্গুমসিদ্ধ ভক্ষণ ছাড়িয়া অগ্নিদৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া পিরানের আস্তিন গুটাইলাম।

"কচু।" ভোদাই আইসক্রীমের কাঠিটি চুষিতে চুষিতে কহিলো। "দেশপ্রেমিক বাঙালিকে আজ কচু খাইতে হইবে।"

নিউজপ্রিন্টটি কাড়িয়া লইয়া দুই টুকরা করিলাম। ধানুকে বলিলাম, তীক্ষ্ন দেখিয়া কোন অস্ত্র যোগাড় করিতে।

ভোদাই কহিলো, "শুনিয়াছি কচু কাটিতে কাটিতে লোকে ডাকাত বনিয়া যায়। সাবধানে কাটিও, কোনরূপ বদভ্যাস যেন আবার না জন্মায়!"

1 comment:

মুহম্মদ ইয়াসির আরাফাত said...

ভ্রাতেঃ লিখালিখি কি স্থগিত করিয়া দিয়াছেন? আমার বড়ই দুর্ভাগ্য, সময়কালে আদমচরিত কিংবা ভোদাইচরিতমানসের সন্ধান পাইয়া থাকি নাই, আজি এতকাল অতিক্রান্ত হইবার পরেও পাঠ্যকালে হাসিয়াছি বিস্তর। দুর্লভ যে স্বল্পসংখ্যক লিখা সময়ের সাথে হারাইয়া যাইবার দুর্দশা লইয়া আসে নাই, ইহাদিগকে তাহাদেরই অংশ বলিয়া প্রতীয়মান হইতেছে। আপনার কলম অব্যাহত থাকুক, ইহাই অনুরোধ করিব।

বিশেষ পুনশ্চঃ তোতলার সাথে তোতলিয়ে কথা বললে তার রাগ হয় শুনেছি, আশা করি আমার কমেন্টটিকে "ভ্যাংগানো" গোত্রে ফেলবেন না। লেখাটি পরে মুগ্ধ হয়েছি, একটু অনুকরন না করে পারলাম না। ভাল থাকবেন

ইয়াসির