Monday, January 26, 2009

বেহুলা ও লখ্যিন্দর [গল্প ১]

লখ্যিন্দর প্রবল উত্তেজিত। সদ্য বিবাহ করিয়াছে সে। নববধূ রূপসী তন্বী বেহুলা পুষ্পসজ্জিত শয্যায় বসিয়া আছে উদ্বিগ্ন মুখে। পারসোনার সজ্জাকারিণীরা তাহাকে ভূতের ন্যায় সাজাইয়া দিয়াছে, মনে মনে ভাবিল লখ্যিন্দর। দেখিয়া মনে হইতেছে জাপানের একটি পতাকা শাড়ি পরিধান করিয়া বসিয়া আছে জবরজং।

লৌহনির্মিত বাসরঘরের ইশটিলনির্মিত দরজাখানি লাগাইয়া লখ্যিন্দর একে একে সবকয়টি খিল সুচারুরূপে আঁটিতে লাগিলো।

বেহুলা কহিল, "লখাই, উঁকি মারিয়া দেখ ত শয্যার তলে কোন ইঁচড়ে পক্ক ননদ-দেবর আড় পাতিয়া আছে কি না?"

লখ্যিন্দর উঁকি মারিয়া কহিল, "না, প্রিয়ে, শয্যার নিচে ত শুধু পুরাতন যায়যায়দিনের কপি শুধু। আর কিছু পাতলা পাতলা পুস্তক ও মেগাজিন দেখিতে পাইতেছি। আমার ভগ্নিভ্রাতাখুল্লতাত কেহই ত এইখানে নাই।"

বেহুলা শুধাইল, "পাতলা পাতলা পুস্তকগুলি কীসের?"

লখ্যিন্দর লজ্জিত রক্তবর্ণ মুখ করিয়া কহিল, "সে আছে কিছু গুপ্ত পুস্তক। বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল। তুমি বুঝিবে না।"

বেহুলা নববধূ হইলে কী হইবে, তাহার আচরণ স্থানীয় খায়ের দারোগার ন্যায়। সে তির্যক নয়নে মধুর কটাক্ষ হানিয়া কহিল, "ম্যানুয়ালই যদি হইবে তবে শয্যার নিচে কেন?"

লখ্যিন্দর ভুরু আন্দোলিত করিয়া খাচ্চরসুলভ হাসি দিয়া কহিল, "এখন ত বিবাহই করিয়াছি। যা হইবে সকলই অটোমেটিক। ম্যানুয়াল কোন কাজেই আর আমি নাই।"

বেহুলা বলিল, "ম্যানুয়াল পাঠ করিয়া কী শিখিলে এতদিন?"

লখ্যিন্দর শেরওয়ানির বোতাম খুলিতে খুলিতে বলিল, "শীঘ্রই টের পাইবে!"

বেহুলা হঠাৎ কহিল, "লখাই, ডাল্লিং, তুমি এই পাঁচব্যাটারির টর্চটি লইয়া লোহার বাসরের পলেস্তারাগুলি উত্তমরূপে পরীক্ষা করিয়া দেখ। মনসা মাগী কিন্তু তোমার পিতার উপর অতিশয় চটিয়াছে। সাপখোপ পাঠাইয়া তোমাকে দংশন করাইতে পারে।"

লখ্যিন্দর কহিল, "তুমি নিজেই দেখ না বেইবে! শেরওয়ানি ত পরিধান কর নাই। ইহা গাত্র হইতে খুলিবার কাজটি যে কীরূপ জটিল তাহা যদি বুঝিতে!"

বেহুলা বলিল, "লখাই, দিন বদলাইয়াছে। মুখে মুখে তর্ক করিও না। যাহা বলিতেছি তাহা কর, নয়তো মাথাব্যথা করিতেছে বলিয়া উল্টাদিকে মুখ করিয়া শুইয়া থাকিবো।"

লখ্যিন্দর বেজার বদনে বেহুলাদত্ত টর্চখানি লইয়া অবহেলাভরে লোহার বাসরের দেয়াল পরীক্ষা করিল।

বেহুলা বলিল, "কী দেখিলে? সব ঠিকাছে? কোন রন্ধ্র নাই তো? কিংবা ফাটল? তোমার পিতা কিন্তু অতিশয় কঞ্জুষ। সামান্য পূজা উপলক্ষে অর্থব্যয় সাশ্রয় করিতে গিয়া মনসা মাগীর সহিত মিছিমিছি কলহে জড়াইল। এই লোহার বাসরের টেন্ডারও শুনিয়াছি সর্বনিম্ন দরপত্রদাতা এক কোম্পানীকে দিয়াছে। মান কেমন, তাহা কে জানে!"

লখ্যিন্দর টর্চখানি শয্যায় নিক্ষেপ করিয়া বিপুল উৎসাহে শেরওয়ানি খুলিতে খুলিতে কহিল, "ইহা ত আর যমুনা ব্রিজ নহে যে ফাটল থাকিবে! সামান্য লৌহ নির্মিত বাসর। চুরি করিবেই বা কীরূপে? আর ড্যাডি নিজেই চান্দাবাজিতে সিদ্ধহস্ত! কাহাকেও চান্দা দান করিয়া চলিবার অভ্যাস তাহার নাই!"

বেহুলা শুধু নাসিকাগ্রকে আনুভূমিকভাবে নড়াইয়া বলিল, "হুঁহ!"

লখ্যিন্দর শুধু বানিয়ান আর পায়জামা পরিয়া উৎসাহভরে শয্যায় চড়িয়া বসিল।

বেহুলা বলিল, "আরেরেরে এইসব কী করিতেছ? যাও আগে এই লৌহনির্মিত মশারিখানা টাঙাইয়া আস!"

লখ্যিন্দর বেহুলার শরীর হইতে হাত সরাইয়া ক্ষুন্নমনে কহিল, "মশারী টাঙাইতে হইবে কেন? ইস্প্রে মারিয়া দিলে হয় না?"

বেহুলা কহিল, "ইস্প্রে মারিলে আমার মস্তক টিপটিপ করিয়া ব্যথা করে। যাহা বলিতেছি কর, মশারীখানা টাঙাও।"

লখ্যিন্দর গোমড়ামুখে কহিল, "আমি ত মশারী না টানাইয়াই শুইতাম এতকাল।"

বেহুলা মুখ ঝামটা দিয়া কহিল, "এতকাল ত কতকিছুই করিতে আবোলতাবোল। যায়যায়দিন আর গুপ্ত পাঠ করিয়া ম্যানুয়ালি রাত গুজরান করিতে। দিন বদলাইয়াছে না? যাও বৃথা তর্ক পরিত্যাগ করিয়া মশারীখানা টাঙাইয়া ফেল ঝটপট।"

লখ্যিন্দর বুঝিল, লৌহবাসরই শুধু নহে, লৌহকঠিনা স্ত্রীও জুটিয়াছে তাহার কপালে। মহা খান্ডারনী। অচিরেই তাহার জীবন ভাজা ভাজা করিয়া ফেলিবে। কীরূপে ইহাকে বশীকরণ করা যায় ভাবিতে ভাবিতে সে মশারীর দড়ির দীর্ঘ প্রান্ত ও হ্রস্ব প্রান্ত বাছিতে লাগিলো।

মশারী টাঙাইয়া শেষ করিয়া লখ্যিন্দর স্পেনদেশীয় ষন্ডের ন্যায় ফোঁস ফোঁস করিতে করিতে অ্যারেনাতে প্রবেশ করিল।

বেহুলা আবারও মুখ ঝামটা দিয়া কহিল, "আরেরেরেরে করে কী লোকটি! মশারী উত্তমরূপে তোষকের নিচে গুঁজিতে হইবে, তাহা কি বিস্মৃত হইয়াছ?"

লখ্যিন্দর বিরক্ত হইয়া বেহুলার শরীর হইতে হাত সরাইয়া কহিল, "লৌহনির্মিত মশারী ত! সে ত আপন ওজনেই নিরাপদরূপে তোষকের উপর বজায় থাকিবে! উহাকে গুঁজিতে হইবে কেন?"

বেহুলা চোখ রাঙাইয়া কহিল, "লখে, পদার্থবিদ্যা কপচাইও না আমার সহিত! ইন্টারমিডিয়েটে লেটার পাইয়াছিলাম পদার্থবিদ্যায়! যাহা বলিতেছি তাহা কর!"

লখ্যিন্দর বেজার মুখে হামাগুড়ি দিয়া শয্যার চারিপার্শ্বে লৌহমশারী উত্তমরূপে গুঁজিয়া আবার বেহুলার কাছে ফিরিয়া আসিল।

বেহুলা কহিল, "উত্তম! এইবার এই পাঁচ ব্যাটারির টর্চটি মারিয়া দেখ মশারীতে কোন ছিদ্র আছে কি না!"

লখ্যিন্দর কহিল, "তুমি একটু দেখ না জান! আমি পায়জামাখানি খুলি। ফিতা আটকাইয়া গিয়াছে, ইহাকে পাট করিয়া আবার খুলিতে হইবে।"

বেহুলা কহিল, "উঁহু, ওসব চলিবে না। আগে নিজের কাজটি সমাধা করিয়া পরে পায়জামা খুলিও।"

লখ্যিন্দর বিরক্তমনে টর্চ মারিয়া মশারী দেখিতে লাগিল অবহেলাভরে।

বেহুলা বলিল, "কী দেখিলে?"

লখ্যিন্দর কহিল, "ছিদ্র নাই। মশাও নাই।"

বেহুলা বলিল, "বেশ। এইবার আইস দেখি পুস্তকপাঠ করিয়া কী শিখিলে কেমন শিখিলে!"

লখ্যিন্দর পায়জামা খুলিয়া কমান্ডো কায়দায় স্ত্রীর উপর ঝাঁপাইয়া পড়িল।

বেহুলা বলিল, "আরেরেরেরে করে কী লোকটি? কনডম পরিধান করিয়াছ?"

লখ্যিন্দর চটিয়া উঠিয়া কহিল, "আবার কনডম কেন?"

বেহুলা বলিল, "পুস্তকই কেবল পাঠ করিয়াছ? হাটেমাঠেঘাটে বিলবোর্ডে লাগবা বাজি বিজ্ঞাপন পাঠ করিয়া দেখ নাই?" এই বলিয়া সে তোষকের নিচ হইতে একটি লৌহনির্মিত কনডম লখ্যিন্দরের হাতে ধরাইয়া দিল।

লখ্যিন্দর হতাশ হইয়া কনডম পরিধান করিতে করিতে হঠাৎ উহ বলিয়া পশ্চাদ্দেশ চাপিয়া ধরিয়া শয্যায় লুটাইয়া পড়িল।

বেহুলা বলিল, "কী হইয়াছে?"

লখ্যিন্দর স্তিমিত কণ্ঠে বলিল, "কী যেন আমাকে নিতম্বে দংশন করিলো!"

বেহুলা বলিল, "আবার কী কামড়াইবে? লোহার বাসরে লোহার মশারীর নিচে মশা ছাড়া আর কী-ই বা কামড়াইতে পারে তোমাকে?"

লখ্যিন্দর উত্তর করিতে পারিল না। লোহার বাসরেও রন্ধ্র ছিল, লোহার মশারীতে ছিদ্র ছিল। তাড়াহুড়ায় লখ্যিন্দরের টর্চ-পরীক্ষায় গলদ রহিয়া গিয়াছিল। মশা নয়, উহা মনসার সর্পের দংশন ছিল। অচিরেই লখাইয়ের মৃত্যু ঘটিল।

বেহুলা লখ্যিন্দরের পালস পরীক্ষা করিয়া মাথায় হাত দিয়া বসিয়া পড়িল। হতভাগাটির গাফিলতির কারণে এখন তাহাকে ইন্দ্রের সামনে গিয়া নাচানাচি করিতে হইবে। বিলম্ব না করিয়া এই ক্ষণেই চর্চা শুরু করিতে হইবে।

বেহুলা উঠিয়া গিয়া টুইনওয়ানের প্লে বোতামটি টিপিল। আকাশ বাতাস প্রকম্পিত করিয়া মিলা গাহিয়া উঠিল,

"হাজার দর্শক মন মজাইয়া
নাচে গো সুন্দরী কমলা ...।"

1 comment:

সায়ন said...

"হাজার দর্শক মন মজাইয়া
নাচে গো সুন্দরী বেহু্লা ...।" হলে কেমন হয়?