Thursday, June 24, 2010

আদমচরিত ০২৫

১.
গিবরিল প্রশ্ন করিল, "ঘটনা কী আদম? তোমাকে ইদানীংলোহিতলণ্ঠন অঞ্চলে ঘুরঘুর করিতে দেখি কেন?"

আদম সহাস্যে কহিল, "কেন ওহে গিবরিল? লোহিতলণ্ঠন অঞ্চলে গমন তো আর নিষিদ্ধ নহে! নিষিদ্ধ শুধু ঐ হতভাগা জ্ঞানবৃক্ষের ফলভক্ষণ! আমি লোহিতলণ্ঠন এলাকায় যাতায়াত করিলেই বা তোমার বসের এমন কী মস্তিষ্কপীড়া?"

গিবরিল কহিল, "আহাহা, ইহার মধ্যে ঈশ্বরকে টানিও না। তুমি আমার বন্ধু তাই তোমার আচরণে আমিই উদ্বিগ্ন, ইহা অফিসের কাজ নহে।"

আদম কহিল, "তোমার কোন কাজখানা অফিসের, আর কোন কাজখানা ব্যক্তিগত, পৃথক করা মুশকিলে হে স্বর্গদূত! তা, তুমি আমাকে দেখিলে কীরূপে? তুমিই বা স্বর্গবেবুশ্যেদের মহল্লায় ঘুরিতেছিলে কী উদ্দেশ্যে?"

গিবরিল আমতা আমতা করিতে লাগিল।

আদম সোল্লাসে কহিল, "আপন গুহ্যদেশে বিষ্ঠা লইয়া আসিয়া আমাকে বলিতেছ শৌচকর্ম শেষে জলধারা ঢালিতে!"

গিবরিল মরিয়া হইয়া কহিল, "স্বর্গবেবুশ্যেদের কাছে স্বর্গদূতেরাই যায়! তুমি মানব, তুমি ঘরে স্ত্রী ফেলিয়া স্বর্গবেবুশ্যেদের গলিতে পা রাখিতেছ কেন?"

আদম কহিল, "স্ত্রী? মানে ঈভ? না ইয়ার, ঐ কুটিলা জটিলা হতভাগিনীর সহিত দাম্পত্যকাণ্ড সম্পাদন আর সম্ভব নহে। আমি আশা ছাড়িয়া দিয়াছি।"

গিবরিল কহিল, "তাই বলিয়া স্বর্গবেবুশ্যে ... ।"

আদম কহিল, "আহাহা, আমি তো আর ঐসবের জন্য যাই নাই। আমি জানি তাহারা রশ্মিনির্মিত, আসল কর্ম সম্পাদন হইবার নহে। আমি গিয়াছিলাম হুর বিনোদিনীর অভিনয় দেখিতে। সে মঞ্চে যেইরূপে হাসিয়া কাঁদিয়া গড়াগড়ি খায়, তাহা অতীব শিক্ষণীয় দৃশ্য।"

গিবরিল কহিল, "হাঁ সে এক পর্যায়ে সকল বস্ত্র খুলিয়া ফেলে, তাহার পর একটি পিংপং বল ...।"

আদম গিবরিলের মুখ চাপিয়া ধরিয়া কহিল, "থাক। আর বলিও না। সকল কথা বিশদে বলিতে নাই। লোকজন সমস্যা করে।"

গিবরিল কহিল, "তুমি ঐ অভিনয় দেখিয়া কী করিবে?"

আদম কহিল, "আরে আগামী বিষ্যুদবার স্বর্গের ময়দানে ঈশ্বর একাদশের সহিত আমাদের আদমপাড়া ক্রীড়া চক্রের ফুটবল ম্যাচ আছ না?"

গিবরিল কহিল, "হাঁ, উহার পোস্টার তো আমিই সাঁটাইয়াছিলাম। কিন্তু উহার সহিত হুর বিনোদিনীর কী সম্পর্ক?"

আদম কহিল, "আমি আমার দলের আক্রমণভাগে খেলি। প্রশিক্ষণের জন্য আসিয়াছি।"

গিবরিল কহিল, 'ফুটবলের প্রশিক্ষণ মাঠে করিতে হয় আদম, খাটে নহে, বিনোদিনীর ঘাটেও নহে।"

আদম সহাস্যে কহিল, "তুমি তো প্রাচীন আমলের ফুটবলের কথা কহিতেছ হে গিবরিল। এখন ফুটবলে প্রতিটি স্ট্রাইকারকেই অভিনয়ে কদলীর ন্যায় সুপক্ক হইতে হয়। প্রতিপক্ষের খেলুড়ের গায়ের বাতাসের ঝাপটায় তোমাকে উল্টাইয়া পাল্টাইয়া চিত উপুড় হইয়া পড়িয়া মাঠে কাতর গড়াগড়ি খাইতে হইবে। উহা কীরূপে করিতে হয়, তাহা রসময় অপেরার হুর বিনোদিনী অপেক্ষা কেহই ভালো জানে না!"

গিবরিল আনমনে কহিল, "হাঁ, বিনোদিনী খাটেও এইরূপ সশব্দ গড়াগড়ি করে বটে!"

আদম অপাঙ্গে গিবরিলকে দেখিয়া কহিল, "গিবরিল তুমি বিবাহ করিয়া ঘরসংসার কর। অসুখবিসুখ হইলে ঈশ্বরের বার্তা সব মাঠে মারা পড়িবে।"

গিবরিল থতমত খাইয়া কী যেন কহিতে গিয়া আদমের দাবড়ানি খাইয়া থামিয়া গেল। "আর চাপা মারিও না! বিষ্যুদবার আসিও ময়দানে।"

২.
বিষ্যুদবার স্বর্গের ময়দানে দূতে দূতারণ্য। ঈভও একটি নতুন কলাপাতা পরিধান করিয়া মাঠের এক পার্শ্বে আসিয়া বসিয়াছে। অদূরেই শয়তান বসিয়া চীনাবাদাম ভাঙিয়া অলস ভঙ্গিতে চিবাইতেছে।

ঈশ্বর নিজের দলের ক্যাপ্টেন, একটি খাটো পেন্টুল পরিয়া তিনি গম্ভীরমুখে দাঁড়াইয়া মাঠ পর্যবেক্ষণ করিতেছেন। হলুদ গেঞ্জি আর নীল পেন্টুল পরিহিত আদমের পায়ে বল, এখনই কিক-অফ হইবে।

রেফারি রেফারিল বাঁশিতে ফুঁ দিবা মাত্র সকলে বিষম লাথালাথি শুরু করিল।

আদম বল পায়ে দিয়া কয়েক পা ছুটিয়াই মর্মান্তিক এক আর্তচিৎকার করিয়া গড়াগড়ি খাইতে লাগিল।

রেফারি বাঁশিতে ফুঁ দিয়া কহিল, ফাউল হইয়াছে। ফ্রি কিক হইবে।

ঈশ্বর গিয়া তর্ক করিতে লাগিলেন। বলিলেন, আদম হুর বিনোদিনীর ন্যায় অ্যাক্টিং করিতেছে।

রেফারিলও বিনোদিনীর অভিনয় বিলক্ষণ দেখিয়াছে, সে মানিতে নারাজ। ফ্রি কিক হইল, কিন্তু আদমের সাঙ্গোপাঙ্গোরা সুবিধা করিতে পারিল না।

ঈশ্বর পায়ের কাছে বল পাইয়াই বিদ্যুৎগতিতে ছুট দিলেন। আদমের দলের ডিফেন্ডাররা তাঁহাকে রে রে করিয়া ছুটিয়া আসিয়া ল্যাং মারিবার চেষ্টা করিয়া বিফল হইল। ঈশ্বর বলটি এক মিডফিল্ডারকে পাস দিয়া নিজে হা রে রে রে রবে ছুটিয়া গেলেন গোলপোস্টের দিকে। মিডফিল্ডারটি বলটি উঁচু করিয়া ক্রস করিল, ঈশ্বর এক চাঁটি মারিয়া সেটি গোলপোস্টের ভিতরে ঢুকাইয়া দিলেন।

বাঁশি বাজিল। গোল।

আদম গিয়া লাফালাফি করিতে লাগিল রেফারিলের সম্মুখে। কহিল, ইহা হ্যাণ্ডবল হইয়াছে। গোল কীরূপে হয়? ঈশ্বরকে লালকার্ড প্রদর্শন করা হউক।

রেফারিল আদমকে কাছে ডাকিয়া চুপিসারে কহিল, বেশি বকবক করিও না। খেলিতে আসিয়াছ, খেলা শেষ করিয়া বাড়ি যাও।

আদম কহিল, গায়ে আসমানি-সাদা জার্সি চাপাইলেই কি সাত খুন মাফ নাকি? যা এইমাত্র ঘটিল, তাহাকে তুমি কী বলিবে?

রেফারিল হাসিমুখে কহিল, হ্যাণ্ড অব গড!

No comments: