Wednesday, November 23, 2011

আদমচরিত ০৪৮


গিবরিল আসিয়া হাঁপাইতে হাঁপাইতে কহিল, "শিগগীর আইস, সর্বনাশ ঘটিতেছে!"

আদম খড়শয্যায় অর্ধশায়িত হইয়া সাভিনিবেশে একটি পাতলা পুস্তক পাঠ করিতেছিল, মনোসংযোগে বিঘ্ন ঘটায় সে চটিয়া কহিল, "সর্বনাশের জন্য কিছু বাকি আছে নাকি? আমার যা কিছু ছিল বুঢ়বাক ঈশ্বরের চক্রান্তে মাটি হইয়াছে। মহাপ্লাবনে স্বর্গ ডুবিলেও আমার কিছু আসে যায় না হে গিবরিল!"

গিবরিল কহিল, "তোমার বাড়ির পিছনের বাঁশবাগানটি শয়তান ইজারা লইয়াছে!"

আদম সাবধানে পাতলা পুস্তকটি বালিশের নিচে চালান করিয়া দিয়া কহিল, "বিদ্যালাভের সময় সর্বদাই বিপত্তি ঘটে রে গিবরিল। চল দেখিয়া আসি।"

কয়েক শত গজ পা চালাইয়া নিকটস্থ বাঁশঝাড়ের সমীপে আসিয়া দুইজনে দেখিল, শয়তান আরও কতিপয় স্বর্গদূত সঙ্গে লইয়া ফিতা লইয়া বংশদণ্ডের আকার প্রকার মাপজোক করিতেছে।

আদম হাঁকিয়া কহিল, "সুপ্রভাত বন্ধু! হঠাৎ বাঁশঝাড়ে? বলি মতলবখানা কী?"

শয়তান ডাক শুনিয়া পিছু ফিরিয়া আদমকে দেখিয়া মধুর হাস্যে কহিল, "সুপ্রভাত আদম! ভাবিলাম, অনেক তো হইল, এইবার কৃষিকাজে মন দেই।"

গিবরিল ফুঁসিয়া কহিল, "বাঁশ কবে কৃষিখাতের অন্তর্ভুক্ত হইল?"

শয়তান স্মিত মুখে কহিল, "মেসোপটেমিয়ায় কিছু জমি কিনিয়াছি হে বার্তাবাহক শ্যালকপুত্র। শুনিয়াছি আগামীর জগত কনস্ট্রাকশনের জগত। চারিদিকে সেতু বাঁধ দালান রাজপথ নির্মাণ হইবে। তখন বাঁশের চাহিদা বিপুল বাড়িবে। তাই আগেভাগে ব্যবসার পথ সুগম করিতেছি।"

আদম গিবরিলকে কহিল, "চল গিবরিল, শুনিলেই ত। চিন্তার কিছু নাই।"

শয়তান পকেট হইতে একটি চশমা আর একটি ভার্নিয়ার ক্যালিপার্স বাহির করিয়া কহিল, "তিষ্ঠ আদম। আসিয়াই যখন পড়িয়াছ, তখন তোমার গুহ্যদ্বারের ব্যাসখানা মাপিয়া লই।"

আদম কহিল, "আমার গুহ্যদ্বারের ব্যাস মাপিয়া তুমি কী করিবে?"

শয়তান সহাস্যে কহিল, "কৃষিকাজে প্রচুর তথ্য লাগে আদম। কয় মিলিমিটার বৃষ্টিপাত ঘটিবে, কয় কিলোমিটার বেগে হাওয়া চালাইবে, কত ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রা থাকিবে, আদমের গুহ্যদ্বারের ব্যাস কত ... এ সবই গুরুত্বপূর্ণ কৃষিতথ্য।"

আদম স্কন্ধ ঝাঁকাইয়া কহিল, "বেশ, তোমার উপকারে লাগিলে মাপিয়া লও।" এই বলিয়া সে আপেলপত্রে কৌপীনখানি নামাইয়া সম্যক আয়োজন করিয়া দাঁড়াইল।

শয়তান নিপুণ হস্তে আদমের গুহ্যদ্বারে ক্যালিপার্স প্রবিষ্ট করিয়া মাপজোক লইয়া খাগের কলম দিয়া প্যাপিরাসের চোথায় সকলই টুকিয়া রাখিল।

আদম কহিল, "তোমার কৃষিকাজে আমার কোন ক্ষতি হইবে না তো হে শয়তান?"

শয়তান মধুরঞ্জিত কণ্ঠে কহিল, "তোমার ক্ষতি হয়, এমন কোন কাজ শয়তান করিবে না হে আদম। লিচ্চিন্তে থাক।"

গিবরিল ফিরিবার পথে আদমকে কহিল, "লক্ষণ ভাল ঠেকিতেছে না হে আদম। তুমি সাবধানে থাকিও।"

আদম চটিয়া কহিল, "তুমি একটি নৈরাশ্যবাদী মূর্খ হে গিবরিল! শয়তান নিজেই কহিতেছে সে আমার কোন ক্ষতি করিবে না, আর তুমি তখন হইতে বকবক করিয়াই চলিতেছ! তোমার জ্বালায় শান্তিতে একটি বেলা নিরিবিলি গুপ্তকোষ পাঠ করিতে পারি না। যাও তুমি তোমার আপন কাজে!"

গিবরিল হতাশ হইয়া উড়িয়া গেল।

পরদিন গিবরিল আসিয়া সক্কাল সক্কাল পুনরায় আদমের দুয়ারে টোকা দিল। আদম দুই মিনিট পর হাঁপাইতে হাঁপাইতে আসিয়া কহিল, "কী বারতা কহ।"

গিবরিল কহিল, "সর্বনাশ ঘটিতে চলিতেছে আদম! শিগগীর আইস!"

আদম কহিল, "আবার কী সর্বনাশ? মহাপ্লাবন ঘটিবে নাকি? নোয়ার নাওখানায় আলকাতরা মাখাইতে বল তোমার ঈশ্বর কর্তাকে।"

গিবরিল কহিল, "শয়তান তোমার বাঁশঝাড়ের বাঁশ কাটিতে শুরু করিয়াছে!"

আদম বিরক্ত হইয়া কহিল, "চল দেখিয়া আসি।"

কয়েক শত গজ পা চালাইয়া দুইজনে বাঁশঝাড়ের সমীপে আসিয়া দেখিল, শয়তান ও তাহার সাঙ্গোপাঙ্গোবৃন্দ মহোৎসাহে বংশ কর্তন করিতেছে। চারিদিকে স্তুপাকৃতি বংশকাণ্ড।

আদম হাঁকিয়া কহিল, "সুপ্রভাত শয়তান! তোমার কৃষিকাজ দেখি ব্যাপক জোরেসোরে আগাইতেছে! ঘটনা কী?"

শয়তান মুখ তুলিয়া দংষ্ট্রাকরাল এক হাসি উপহার দিয়া কহিল, "তা আগাইতেছে বটে! সামনে বাণিজ্যের মৌসুম। সময় থাকিতে বাঁশ কাঠ কাটিয়া গুছাইয়া রাখিতেছি। ঠিকাদারেরা দুইদিন পর চিলুবিলু করিয়া মক্ষিকার ন্যায় ছাঁকিয়া ধরিবে, দেখিও।"

গিবরিল ফুঁসিয়া কহিল, "ঠিকাদারেরা কবে হইতে চোখা বাঁশ ফরমায়েশ করিতেছে?"

শয়তান একটি দাও দিয়া বাঁশ ছাঁটিয়া অগ্রভাগ সূক্ষ্ম করিতেছিল, গিবরিলের প্রশ্ন শুনিয়া সে মিষ্টি হাসিয়া কহিল, "পেলব বাঁশ নির্মাণের কাজে কমই আসে ওহে হরকরার ছাও! আগেভাগে এক মাথা চোখা করিয়া মূল্য সংযোজন করিয়া রাখিতেছি।"

আদম গিবরিলের পানে ফিরিয়া কহিল, "দেখিলে তো? চিন্তার কিছু নাই। কৃষিকাজ আর ব্যবসা চলিতেছে। চল আমরা যাই।"

শয়তান গলা খাঁকরাইয়া কহিল, "ওহে আদম, আসিয়াই যখন পড়িয়াছ, তখন তোমার গুহ্যদ্বারের ব্যাসখানি পুনরায় মাপাইয়া লইতে দিবে নাকি?"

আদম বিস্মিত হইয়া কহিল, "গতকল্যই না এক দফা মাপিলে?"

শয়তান সুমিষ্ট হাসিয়া কহিল, "কৃষিকাজে তথ্য হালনাগাদ রাখিতে হয় হে আদম। তাছাড়া গতকল্য তোমার গুহ্যদ্বারের ব্যাস আর আজিকে তোমার গুহ্যদ্বারের ব্যাসে যে আকাশ পাতাল ফারাক দেখা দিবে না, তাহা কে বলিতে পারে?"

আদম কহিল, "তা বেশ তো, তোমার উপকারে লাগিলে মাপিয়া লও।" এই বলিয়া সে কৌপীন উঁচু করিয়া সম্যক আয়োজন করিয়া দাঁড়াইল। শয়তান নিপুণ হস্তে ক্যালিপার্স প্রবিষ্ট করিয়া মাপজোক লইল। তাহার পর সেই ক্যালিপার্স দ্বারা হস্তধৃত বংশদণ্ডের সূক্ষ্ম প্রান্তটির অগ্রভাগে কী যেন মাপিতে লাগিল।

আদম কহিল, "তোমার কৃষিকাজে আমার কোন ক্ষতি হইবে না তো হে শয়তান?"

শয়তান নিক্কণমধুর কণ্ঠে কহিল, "তোমার অনিষ্ট হয়, এমন কোন কাজ শয়তান করিবে না হে আদম। লিচ্চিন্তে থাক।"

গিবরিল ফিরিবার পথে আদমকে কহিল, "লক্ষণ ভাল ঠেকিতেছে না আদম। সাবধানে থাকিও!"

আদম ক্ষেপিয়া কহিল, "তুমি সবকিছুতেই কেবল দুর্লক্ষণ দেখ হে গিবরিল! শয়তান নিজে কহিল সে আমার কোন অনিষ্ট করিবে না, আর তুমি সেই তখন হইতে ঘ্যানাইতেছ! যাও তুমি তোমার আপন কাজে, আমি বাড়ি গিয়া একটু শান্তিসহকারে বড়দের ব্যায়াম করি!"

গিবরিল ব্যাজার হইয়া উড়িয়া গেল।

পরদিন প্রত্যুষে আদমের কুটিরের দুয়ারে ঘা পড়িল। আদম দরজা খুলিয়া দেখিল, শয়তান দণ্ডায়মান। হাতে একটি সুতীক্ষ্ণ বংশদণ্ড। অদূরে দণ্ডায়মান গিবরিল।

আদম কহিল, "কী ঘটনা শয়তান? বায়সও নিদ্রিত এখন, আর তুমি এইবেলা আমার বাড়িতে? বাঁধ ভাঙিয়া কোথাও মহাপ্লাবন ঘটিল নাকি? নোয়ার নাওখানার নোঙর উত্তোলন করিয়াছে নাকি কেউ?"

শয়তান মধুর হাসিয়া কহিল, "কিছু তথ্য দরকার আদম। তুমি কি অনুগ্রহ করিয়া তোমার কৌপীন নামাইয়া তোমার গুহ্যদ্বারটি প্রস্ফূটিত করিয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইবে কিয়ৎক্ষণের জন্য? আমি কিছু তথ্য লইয়াই প্রস্থান করিব, বেশি সময় লাগিবে না।"

আদম কহিল, "তোমার এই কৃষিকাজে আমার কোন ক্ষতি হইবে না তো হে শয়তান?"

শয়তান বীণাবিনিন্দিত মধুর কণ্ঠে কহিল, "তোমার ব্যথা লাগে, এমন কোন কাজ শয়তান করিবে না হে আদম। লিচ্চিন্তে থাক।"

আদম কহিল, "তা বেশ তো, তোমার উপকারে যদি লাগে, আপত্তি কী?" এই বলিয়া সে কৌপীন খুলিয়া ঘুরিয়া সম্যক আয়োজন করিয়া দাঁড়াইল।

গিবরিল নক্ষত্রবেগে উড়িতে উড়িতে ঈশ্বরের দরবারে গিয়া সিংহদ্বারে ঘা মারিতে মারিতে আর্তনাদ করিয়া কহিল, "জাঁহাপন, দরওয়াজা খুলুন! শয়তান আদমকে ধরিয়া পোন্দাইতেছে, আদমের কোনো হুঁশই নাই!"

ঈশ্বর এক পেয়ালা চা হাতে প্রসন্ন বদনে দরজা খুলিয়া কহিলেন, "কী ব্যাপার গিবরিল, তুমি এই ফজরের ওয়াক্তে সক্রিয় যে?"

গিবরিল সাশ্রুনয়নে কহিল, "শয়তান আদমকে পোন্দাইতেছে খোদাবন্দ! অথচ আদম ইহা অনুধাবনও করিতে পারিতেছে না! সে আপনা হইতেই কৌপীন খুলিয়া ঘুরিয়া দাঁড়াইতেছে প্রত্যহ!"

ঈশ্বর সুমধুর হাসিয়া কহিলেন, "আমি কী করিব বল? ইহা তাহাদের আভ্যন্তরীণ বিষয়!"

No comments: