আমি প্রকৃতিপ্রেমিক৷ প্রায়ই পার্কে বসিয়া পাখি দেখি৷ ছোট পাখি, মাঝারি পাখি, বড় পাখি৷
আমার পার্শ্বে যখন বৃদ্ধ ভদ্রলোকটি আসিয়া বসিলেন, তখন তাঁহার বিদঘুটে প্রশ্নের জবাবে এই উত্তরই দিয়াছিলাম৷
বৃদ্ধ শুধাইয়াছিলেন, "ইয়ং ম্যান, আপনি এই পার্কে নিরালায় বসিয়া কী সন্ধান করিতেছেন?"
আমি উত্তরটি দিয়া ঠোঁটে একটি মৃদুমন্দ হাসির দোলা ফুটাইয়া তুলিয়াছিলাম৷ যুগের সাথে তাল মিলাইয়া আমি চলি না, এবং তাহা লইয়া আমি গর্বিত৷ আমার বয়সী যুবারা যেইখানে অবসরে আড্ডা মারে, গুলতানি দেয়, নারী লইয়া ফূর্তি লোটে, কিংবা সামহোয়্যার ইন নামক এক অলীক স্থানে রাজাউজির বধ করে, আমি সেইখানে পার্কে বসিয়া প্রকৃতির রংরূপরস উপভোগ করি৷
বৃদ্ধ আমার জবাব শুনিয়া হাসিয়া ফেলিলেন৷ বলিলেন, "আপনি প্রকৃত রসিক৷ আমিও এককালে এই কর্ম করিতাম৷ পাখি দেখিতাম৷"
আমি শুধাইলাম, "এখন দেখেন না?"
বৃদ্ধ কহিলেন, "এখন আর দেখিয়া কী হইবে? আমার কী আর সংবিধান সমুন্নত হয়?"
পাখির সহিত সংবিধানের সম্যক সম্পর্ক নির্ধারণ করিতে না পারিয়া বোকার মতো কহিলাম, "মানে?"
বৃদ্ধ চক্ষু টিপিয়া কহিলেন, "দেখুন ঐ ছোট্ট পাখিটির দিকে?" বলিয়া অঙ্গুলি নির্দেশ করিলেন দূরে একটি যুগলের দিকে৷ তাহারা ঘাসের উপর গাছের ছায়ায় বসিয়া নিরিবিলি প্রেমালাপে মগ্ন৷ মেয়েটি কিশোরী, তাহার বক্ষ তেমন প্রস্ফূটিত নহে৷
বৃদ্ধ একে একে মাঝারি ও বড় পাখিও সনাক্ত করিলেন৷ তাঁহার ইঙ্গিত বুঝিয়া আমার কর্ণমূল আরক্ত হইলো৷ বুঢ়া তো অতিশয় ফাজিল প্রকৃতির৷ গুরুজনসুলভ সুশীল নহে৷
বৃদ্ধ দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া কহিলেন, "তাছাড়া দ্রবমূল্য চড়চড় করিয়া বাড়িয়া গিয়াছে৷ সংবিধান সমুন্নত হইলেও দামে পোষাইতো না৷"
আমি এইবার "সংবিধান সমুন্নত" হইবার ব্যাপারে আবছা একটা আন্দাজ করিতে পারি৷
বৃদ্ধ বকিয়া চলেন৷ "এককালে আমিও আপনার মতোই পার্কে আসিয়া পাখি দেখিতাম৷ নির্বাচন করিতাম৷ দরদাম করিয়া পোষাইলে অধিবেশন বসাইতাম৷ তখন আমি আরো শক্তপোক্ত ছিলাম, প্রায়ই পাখিরা অনুনয় বিনয় করিতো অধিবেশন মুলতুবি রাখিতে৷ আমি শুনিতাম না৷ কড়ি ব্যয় করিয়া অধিবেশন বসাইতেছি, মুলতুবি আবার কী? একেবারে উভয় পক্ষের উন্নয়নের জোয়ার বহাইয়া তারপর ক্ষান্ত দিতাম৷ কী সব দিন গিয়াছে৷"
আমি বাকরুদ্ধ হইয়া যাই বৃদ্ধের স্পর্ধায়৷
তিনি স্বপ্নালু চোখে বলেন, "তখন আমার সংবিধান ঘন ঘন সমুন্নত হইতো৷ তাহার পর বয়স হইলো৷ সংবিধান মাঝে মাঝে লঙ্ঘন হইতে লাগিলো৷ বাধ্য হইয়া খাদ্যদ্রব্যে রাসায়নিক মিশাইতে হইতো৷"
আমি ভাবিলাম, হতভাগাটার গালে প্রকান্ড এক কীল মারিলে কেমন হয়?
বৃদ্ধ লম্পটটি বকিতেই লাগিলেন, "ইদানীং আসি অভ্যাসের টানে৷ মাঝে মাঝে সমবয়সী বন্ধুবান্ধব আসিয়া আব্দার ধরে৷ বলে আপনি বাছাই করিয়া দিন৷ অভিজ্ঞ মানুষ আপনি৷ আপনিই আমাদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার৷ আমি রাগ করি, বলি খবরদার বাজে কথা বলিবেন না, তাহারা হাসে৷"
আমি ছটফট করিতে লাগিলাম৷ ব্যাটা লুচ্চা৷
বৃদ্ধ মৃদু হাসিয়া কহিলেন, "প্রার্থীর মান অবশ্য ইদানীং বাড়িয়াছে৷ তাহাদের আসনও আগের তুলনায় উন্নত৷ তবে তাহাদের সহিত তাল মিলাইতে গেলে এখন এই বয়সে আমার সাংবিধানিক জটিলতা দেখা দিতে পারে৷"
আমি রাগের চোটে উঠিয়া পড়িয়া কহিলাম, "আপনার লজ্জা হওয়া উচিত্ ...!"
বৃদ্ধটি দীর্ঘশ্বাস ফেলিয়া বলিলেন, "এই হইলো আপনাদের দোষ৷ নিজেরা নোংরায় আকন্ঠ নিমজ্জিত হইয়া অপরকে নোংরা বলিয়া গালাগালি করেন৷"
আমি কী আর বলিবো, চলিয়া আসিলাম পার্ক হইতে৷
2 comments:
অসাধারণ। অনেক অনেক ধন্যবাদ।
আপনাকেও ধন্যবাদ।
Post a Comment