Monday, February 06, 2006

বাসর রাতে বেড়াল নিধনের ইতিবৃত্ত


বাসর রাতে বেড়াল মারার ইতিহাস নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে৷ বিশেষজ্ঞদের কাজেই হচ্ছে অন্যদের সাথে ফারাক রেখে একটা মত পোষা, কিন্তু অ্যাতো কাঠখড় পুড়িয়ে তাঁরা বিশেষজ্ঞ হয়েছেন, কার মত ফেলে দিয়ে কারটা গ্রহণ করবো তা নিয়ে ঝামেলা লেগে যেতে পারে৷


একটি প্রচলিত মত, যেটি কাৎ‍সেনশ্লেগার তত্ত্ব বলে পরিচিত, আমাদের টেনে নিয়ে যায় খ্রিষ্টের জন্মেরও বহু আগে, প্রাচীন মিশরে৷ বহু ফারাও ওফারাওপত্নীদের পিরামিডে পাওয়া গেছে মৃত বেড়ালের মমি৷ ধারণা করা হয়, নিজ হাতে খড়গ দিয়ে একটি কুমারী বেড়ালের শিরচ্ছেদ করে ফারাওগণ তাঁদের বাসরঘরে প্রবেশের অধিকার পেতেন৷ যে ফারাও এক কোপে একটা বেড়ালের মাথা কাটতে পারে না, সে কিভাবে বিয়ের আব্দার করে? নিজের শৌর্যের প্রমাণ হিসেবেই ফারাওরা বাসররাতে বেড়ালনিধন করতেন৷ মানে, কোপানোর আগে কোপানো আর কি।


তবে এই মতবাদকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিয়েছেন সালমানকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের অধ্যাপক হুয়ান মাতাগাতোস৷ তাঁর মতে, বাসর রাতে বেড়াল মারার দায়িত্বটি পুরুষ নয়, নারীর কর্তব্য৷ এবং এই রীতি প্রচলিত ছিলো প্রাচীন ইনকাদের মধ্যে৷ বেড়ালকে অত্যন্ত ঝগড়াটে ও স্বার্থপর প্রাণী হিসেবে বিবেচনা করতো তারা, এবং দাম্পত্য জীবনে প্রবেশের পূর্বে এসব বদগুণের প্রতীক হিসেবে একটি বেড়ালকে ধরে এনে মুড়ো খ্যাংড়া দিয়ে পেঁদিয়ে তার জীবননাশের মাধ্যমে বিবাহিত রমণীটি বাসরঘরে প্রবেশ করতো৷ তবে ইনকাদের রহস্যময় পিরামিডের ভেতরের দেয়ালচিত্র থেকে জানা যায়, বেড়াল পেটানোর এই ধারা তারা বিবাহিত জীবনেও অব্যাহত রাখতো স্বামীদের পিটিয়ে৷


তবে অতি সম্প্রতি কটকে আবিষ্কৃত কিছু প্রাচীন ফার্সি পুঁথির পাঠোদ্ধার করে জানা গেছে, বাসর রাতে বেড়াল মারার ব্যাপারটি জনপ্রিয় করেন সম্রাট শের শাহের অনুচর খুসরাও খাঁ৷ কথিত আছে, খুসরাও খাঁ তাঁর বাসরঘরে নববধূর ঘোমটা উত্তোলনের পর যখন তাঁর সৌন্দর্য অবলোকন করে অশুদ্ধ পশতুতে বাহবা দিতে উদ্যত হয়েছিলেন, তখন তাঁর মুখরা স্ত্রী শূলবদন বানু মুখ ঝামটা দিয়ে বলেছিলেন, জনাব আপনার মনিব শের শাহ তো স্ত্রীকে খুশি করার জন্যে এক কোপে একটা শের মেরে এনেছিলেন, আর আপনি দিব্যি শুন্য দস্ত সাথে করে গটমটিয়ে বাসরঘরে ঢুকে পড়লেন? আরে ছোহ! পরওয়ারদিগার এ কেমন খসম জুটালেন আমার শিরে? নববধূর মুখে এই কটূবাক্য শুনে খুসরাও অত্যন্ত মনক্ষুণ্ন হন, এবং ঘরের পাশের গলি থেকে একটি বিড়ালকে গেরেফতার করে এনে তার মুন্ডচ্ছেদ করে বলেন, বিবি, শের তো গন্ডায় গন্ডায় মেলে না, তাই শেরের মওসির শির কেটে আনলাম তোমার জন্যে৷ তবে সাবধান হাঁ, আমার কিন্তু যখন তখন তলোয়ার উঠে যায়, বেশি বাকোয়াজ করলে কিন্তু শের বিল্লি আদমী কিছু খায়াল থাকে না৷ এখন ঘাগড়াখানা উতারো দেখি, ইত্যাদি ইত্যাদি৷


জনশ্রুতি আছে এর পরে খুসরাও খাঁ লোকমুখে বিল্লি খাঁ বলে পরিচিত হন, এবং অন্দরে বাহিরে ব্যাপক সমাদর লাভ করেন৷


No comments: