Thursday, February 02, 2006

সায়েন্স ফিকশন লিখলাম একটা


মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রের অধিনায়ক তাঁর তিনটি চোখ লাল করে তাকালেন প্রকল্প পরিচালকের দিকে। "আপনি কি মশকরা করছেন আমার সাথে? বাসযোগ্য গ্রহ পাওয়া গেছে, বললেই হলো?"

প্রকল্প পরিচালক স্পষ্টতই অপমানিত বোধ করেন, তাঁর শুঁড়ের ডগা সবুজ হয়ে ওঠে। তিনি গম্ভীর স্বরে বলেন, "মশকরা? মাননীয় অধিনায়ক, এত ডজন ডজন মুদ্রা ব্যয় করা হয়েছে এই ইন্টারফেয়ারোমেট্রি প্রযুক্তির পেছনে, বাসযোগ্য গ্রহ খুঁজে বার করার জন্যে, আর আপনি বলছেন মশকরা?"

অধিনায়ক তিনটি ভুরু পালাক্রমে নাচান। "মুদ্রা খরচ তুলে খোঁটা দিচ্ছেন কেন? মুদ্রায় টান পড়লে আমরা আমাদের গ্রহের তেলসমৃদ্ধ কোন অঞ্চল আক্রমণের জন্যে একটা প্রস্তাব পাঠাবো সরকারের কাছে। যাই হোক, বলুন দেখি কী গ্রহ খুঁজে পেয়ে আপনি এতো আনন্দিত।"

পরিচালক গম্ভীর হয়ে বললেন, "এটি মাত্র দেড়শো আলোকবর্ষ দূরে, তবে ধূলিমেঘের কারণে অ্যাদ্দিন আমাদের যন্ত্রে ধরা পড়েনি। অবশ্য আমাদের এতোদিন ইন্টারফেয়ারোমেট্রি প্রযুক্তিও ছিলো না ...।"

অধিনায়ক বিরক্ত হয়ে বললেন, "আরে ধুত্তুরি ইন্টারফেয়ারোমেট্রির গুষ্টি কিলাই, কাজের কথা বলেন, আমার আবার মেয়েটাকে ইস্কুল থেকে আনতে যেতে হবে।"

পরিচালক নাখোশ মুখে বললেন, "এই গ্রহের নাম পৃথিবী। সূর্যের একটি গ্রহ।"

অধিনায়ক নাক সিঁটকে বললেন, "সূর্য? কী বিদঘুটে নাম! কতবড় তারা এটা?"

পরিচালক হাত দিয়ে প্রথমে দেখালেন তাঁদের নিজের তারা কত বড়। তারপর পা দিয়ে দেখালেন সূর্য কত বড়।

অধিনায়ক মনক্ষুণ্ন হলেন। "পুঁচকে একটা তারা! যাকগে, এতো বাছলে চলে না। তা অক্সিজেন টক্সিজেন আছে কিছু গ্রহটায়? পানি?"

পরিচালক মাথা নাড়েন চিন্তিত মুখে। "আছে।"

অধিনায়ক বলেন, "তাহলে দেরি কেন? কিছু দাগী আসামী জোগাড় করে পাঠিয়ে দিন ওখানে। কিছু রসদপাতি দিয়ে দেবেন সাথে, পঞ্চাশ বছর পর পর খোঁজ নিয়ে দেখবেন ব্যাটারা কেমন আছে।"

পরিচালক বললেন, "মাননীয় অধিনায়ক, আপনাকে যে কথাটা বলার অবকাশ পাইনি এতোক্ষণ ... এই পৃথিবীতে প্রাণের বিকাশ ঘটেছে। অন্তত একটি প্রজাতির প্রযুক্তিসম্পন্ন তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমান প্রাণীর বাস রয়েছে সেখানে। আমরা ... আমরা তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গের একটি সিগন্যালও পেয়েছি আমাদের বেতার টেলিস্কোপে।"

অধিনায়ক হাঁকরে তাকিয়ে থাকেন পরিচালকের দিকে। "আগে বলবেন না? কী সিগন্যাল পেয়েছেন?"

পরিচালক তাঁর কোমরে বাঁধা যন্ত্রে একটি সুইচে চাপ দ্যান, সেখানে বিজাতীয় সুরে শব্দ বেজে ওঠে, "ধুম মাচা লে ধুম মাচা লে ধুম!"

অধিনায়ক তাঁর কানগুলো বুঁজিয়ে ফেলেন। "বীভৎস! বীভৎস! আপনার রুচি এতো খারাপ হলো কিভাবে পরিচালক সাহেব? কোন তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমান প্রাণী এমন বিটকেল সিগন্যাল পাঠাতে পারে? আমার তো কানের কাঠিগুলো ভেঙে যাবার উপক্রম!"

পরিচালক গম্ভীর মুখে বললেন, "আমার ধারণা এরা ইচ্ছে করেই এসব বীভৎস সিগন্যাল চারদিকে পাঠায়, আত্মরক্ষার জন্যে। কিন্তু যা-ই হোক, তড়িচ্চুম্বকীয় তরঙ্গে সিগন্যাল পাঠানোর ক্ষমতা যখন এদের আছে, এরা নিশ্চয়ই তৃতীয় মাত্রার বুদ্ধিমান।"

অধিনায়ক দাঁত খিঁচিয়ে বলেন, "আমার পছন্দ হয়নি এদের। যান, কিছু র‌্যাপিড অ্যাকশন রক্ষী নিয়ে যান সাথে। আর সবচে ওঁছা দাগীগুলোকে দিয়ে নয় নম্বর মহাকাশযান বোঝাই করবেন। রক্ষীদের বলবেন ঐ গ্রহের সব বিটকেলকে মেরে সাফ করে আমাদের বসতি স্থাপনে সহায়তা করতে।"

পরিচালক ভয়ে ভয়ে বলেন, "রাষ্ট্রনায়ক যদি পরে জানতে চান, ওরা কিভাবে মারা পড়লো?"

অধিনায়ক বিরক্ত মুখে দেয়ালে ঝোলানো ঘড়ি দ্যাখেন। "জানতে চাইলে বলবেন ওরা ক্রসফায়ারে মারা গেছে, তাহলেই তো ল্যাঠা চুকে যায়। যান এবার ভাগুন, আমি আমার মেয়েটাকে ইস্কুল থেকে আনতে যাচ্ছি।"

পরিচালক উড়ে বেরিয়ে আসেন অধিনায়কের ঘর থেকে। ধন্য ইন্টারফেয়ারোমেট্রি, আর দেড়শো বছর পরই পৃথিবীতে বংশ বিস্তার করবেন তাঁরা।

1 comment:

Unknown said...

সামুর কার যেন একটা পোষ্টে আপনার ব্লগের ঠীকানা পেয়েছিলাম, প্রথম পড়লাম দুনিয়া কাপানো ৫মিনিট তারপর আদমচরিত তারপর প্রথম থেকে শুরু করলাম।

এড্রেসটা আরও আগে পেলে আরও ভাল লাগত!