Sunday, March 19, 2006

মাসুদ রানারে স্মরি


আমি পড়তে শিখেছি অল্প বয়সে৷ বড় ভাইবোনেরা অনেকদিন পর একটা ছোট ভাই পেয়ে বেশ সময় দিতেন আমাকে, অনেকটা খেলনার মতো, তাই হুড়োহুড়ি করে লেখাপড়া শিখিয়ে দিয়েছিলেন৷ তাই আমি মাসুদ রানা পড়তে শুরু করি ফেলুদারও আগে, ক্লাস ফোরে পড়ার সময়৷ তার আগে অবশ্য কুয়াশা সিরিজ পড়ে শেষ করে ফেলেছি, আর শঙ্কু খানিকটা৷ তারপরই এই মহাপুরুষের কীর্তি আমার গোচরে আসে৷

তবে আমি এঁচড়ে তখনও পাকিনি৷ মাসুদ রানার কীর্তি আমাকে বিস্মিত করতো৷ প্রতি পর্বেই সে নিত্যনতুন কোন নারীর অন্দরমহলে (আক্ষরিক অর্থে নিলে লজ্জা পাবো, আবার রূপক অর্থে নিলেও) আনাগোনা করে, একেওকে মেরেধরে একশা করে ছাড়ে, আবার পদে পদে নানা রসিক বোলচাল ... আমি মুগ্ধ হই তার কার্যকলাপে৷ ঠিক করি বড় হয়ে মাসুদ রানা হবো৷ এর আগে ভাবতাম জলদস্যু হবো, দেখলাম জলদস্যু হওয়ার চেয়ে মাসুদ রানা হওয়াই বেশি মাস্তিপ্রদ ও মৌজদায়ক৷

মাসুদ রানার বান্ধবীদের প্রেমে পড়তাম আমিও৷ তাদের দেহ সৌষ্ঠব ও সলজ্জ সমর্পণের রাখোঢাকো বর্ণনা পড়ে সেই বালক বয়সেই একটু পাক ধরলো আমার মনে৷ হুমম৷ মনে মনে ভেবে রাখি, অনাগতা সোহানাদের কী কী উপায়ে খাতির করা যায়৷

কিন্তু মাসুদ রানার প্রচ্ছদগুলো শাহাদৎ চৌধুরী একেবারে মন খুলে করতেন৷ বিবসনা নারীর মোহময়ী কটাক্ষ দিয়ে একেবারে ভরপুর ... মূল্য এক কোটি টাকা মাত্র, আই লাভ ইউ ম্যান, নীলছবি ... এগুলো বেশ ইয়ে প্রচ্ছদসম্পন্ন ছিলো৷ আমার বড় ভাই খুব যত্ন করে মলাট দিতেন সব বইয়ে, কৌতূহলী বাড়ন্ত আমি আবার মলাট খুলে খুলে উঁকিঝুঁকি দিতাম৷

বইয়ের ব্যাপারে বাসায় গুরুজনেরা বোধহয় একটু উদারই ছিলেন, তবে তাঁরা মাঝে মাঝে পঠিত বইগুলো হাতে নিয়ে উল্টেপাল্টে দেখে গম্ভীর হয়ে যেতেন, নিজেদের মধ্যে গুজগুজ করে মাঝেমাঝে ইনজাংশন জারি করতেন, উঁহু, ঐ শেলফের তিন নাম্বার তাকের বইগুলো আরো বড় হয়ে পড়বে৷ এখন এই নাও, দার্জিলিং জমজমাট পড়ো বরং৷ দুষ্টু আমি রাজি হয়ে যেতাম লক্ষী ছেলের মতো, কারণ ঐ দাগী তাকের বইগুলো ইতিমধ্যে পড়ে ফেলেছি৷ মুহাহাহাহাহা৷

আমার রানাফিলিয়া অবশ্য বেশিদিন থাকেনি, কয়েক বছর পর রানার অভিযানের মান নামতে থাকে৷ শান্তিদূতের পর রানা আর পড়িনি সেভাবে, স্কুলের পড়াশোনার চাপ তেমন ছিলো না, তাই কী চাপে পড়ে রানা ছেড়ে দিলাম জানি না নিজেও৷ এখনও মাঝে মাঝে দানবাকৃতির শেলফের পেছনের সারি থেকে মাঝে মাঝে বার করে পড়ি জিপসী, রিপোর্টার, আই লাভ ইউ ম্যান, হ্যালো সোহানা, বিদায় রানা, চাই সাম্রাজ্য, লাল পাহাড়, অকস্মাৎ‍ সীমান্ত... ভালো লাগে৷ এক একটা বই যে শৈশবের এক একটা দিনের স্মারক হয়ে আছে, সেটা বুঝতে পারি৷ সেই পুরনো বাড়ির জানালার মোটা কাঁচ দিয়ে আসা রোদ, কড়ই গাছের ছায়ার কথা মনে পড়ে, এক একটা পৃষ্ঠা উলটাই, মাঝে মাঝে চোখ কেমন ভেজা ভেজা মনে হয়৷ মাসুদ রানা পড়তে পড়তে আমি আবার শিশু হয়ে যাই৷


2 comments:

Tareq Nurul Hasan said...

কালো ব্যাকগ্রাউন্ডে ছোট লেখা পড়তে খুব সমস্যা, তবু মুখফোড়ের লেখা বলেই কষ্ট করে পড়লাম।
দারুন লাগলো। স্মৃতিময়।

মুখফোড় said...

দু'জনকেই ধন্যবাদ :)।

কনফুসিয়াস, আপনি যদি ফায়ারফক্স ব্যবহার করেন, তাহলে CTRL চেপে ধরে + চাপ দিন, দেখবেন ছোট লেখা বড় হয়ে যাচ্ছে :) ...