Friday, September 08, 2006

হেবো ছাগাজন


অভিদেষ্টা কোম্পানির নাটের গুরু পর্বত্‍ মওলার কাছে ছাগাজন চাকরি করেছিলো কয়েক বছর৷ পর্বত্‍ মওলা বদমেজাজি লোক, জুতা পালিশ করে না রাখলে সে বুট পরে লাথি মারতো৷ কয়েকবার লাথি খেয়েই হেবো সাবধান হয়ে গিয়েছিলো৷ আক্কলমন্দের জন্য ইশারাই কাফি৷

তো, পর্বত্‍ মওলা একদিন এক আজব তেলেসমাতি শুরু করলো৷ ইন্টারনেট৷ কম্পিউটারে বসেই দুনিয়ার খবরাখবর পাওয়া যায়৷ শুধু মাউজ নামের ঐ বস্তুটা দিয়ে নাড়াচাড়া করতে হয়, আর কীবোর্ডে কিছু টিপাটিপি৷

হেবো ছাগাজনের বড় শখ হয়, সেও ইন্টারনেট ঘাঁটবে৷

পর্বত্‍ মওলা চোখ রাঙায়, বলে যা ভাগ, জুতা কালি করে নিয়ে আয় দুই জোড়া৷ এক জোড়া আমি পরবো, আর আরেকজোড়া তুই মাথায় নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবি৷ শখ কতো! জানিস এটা অবৈধ?

হেবোর চোখ ফেটে জল আসে৷ ওহ না, জল না, সে সামলে নেয়, তারপর চোখ ফাটিয়ে পানি নামায়৷ জল তো বলে যত ইন্দিরা গান্ধীর দালালেরা৷

পর্বত্‍ মওলা অফিসে চলে গেলে একদিন হেবো কম্পিউটারের সামনে বসে পড়ে৷ আনমনে মাউজ নাড়ে, কীবোর্ডে খুটখাট করে৷ অমনি কোত্থেকে একটা ন্যাংটা মেয়ের ছবি ধীরে ধীরে ফুটে উঠতে থাকে৷ হেবোর তো অবস্থা কাহিল৷ ওফফ, কী দারুণ ব্যাপার!

কিন্তু হেবো ধরা পড়ে যায় পর্বত্‍ মওলার কাছে৷ ব্যাপক চড়চাপড় খেতে হয় তাকে৷

এর কিছুদিন পর একদিন ছুটির দিনে পর্বত্‍ মওলার ইয়ারদোস্ত কয়েকজন কাচ্চু খেলতে বসে৷ হেবো শোনে, তারা ইন্টারনেট ব্যবহার নিয়ে ব্যাপক তুলা ধুনছে৷ পর্বত্‍ মওলা দাবি করে, সে-ই প্রথম দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার করেছে৷ আরেক বন্ধু বলে, সে দ্্বিতীয়৷ বাকি দু'জনও তৃতীয় আর চতুর্থ স্থানের জন্য কামড়াকামড়ি করতে থাকে৷ চা দিতে গিয়ে হেবো মুচকি মুচকি হাসে৷ সে তবে পঞ্চম জন৷ মন্দ কী? প্রথম পাঁচজনের মধ্যে থাকতে পারাটাই কম কী?

তবে হেবোর অধ্যবসায় ছিলো৷ সে কালক্রমে পর্বত্‍ মওলার মা-কে ভজিয়ে কমিউিনিটি স্যাটেলাইট ইশকুলে লেখাপড়া শেখে, আর মাঝে মাঝে পর্বত্‍ মওলার কাছে আইটির টুকিটাকি৷ যা সে শিখতো, তা আবার যত্ন করে শ্লেটে লিখে রাখতো৷ একদিন পর্বত্‍ মওলা ব্যাপার স্যাপার দেখে তাকে এক দিস্তা কাগজ আর একটা পেন্সিল কিনে দেয়৷

হেবো সেই কাগজে লিখতে থাকে, ভাইটি আমার আইটি শেখো৷

একদিন পর্বত্‍ মওলার এক সম্পাদক বন্ধু এসে ধর্ণা দেয়, দোস্ত, পত্রিকা বার করেছি, লেখা জমা দিতে হবে তোকে, না বলতে পারবি না৷

পর্বত্‍ মওলা হেসে খুন৷ তোর পত্রিকায় লেখা জমা দেবো আমি? পাগলে কামড়েছে তোকে? আমাকে সায়েন্স পত্রিকা থেকে সাধাসাধি করে, লেখি না, আর তুই তো কোথাকার জব্দফা মোস্তার! যা ফোট!

বন্ধুটা ফোটে না, ঘ্যান ঘ্যান করতে থাকে৷ পর্বত্‍ মওলা ঠা ঠা করে হেসে বলে, যা হেবোর কাছে যা, ও দেখি ইদানীং কী সব লিখছে!

হেবো দৌড়ে ট্রাঙ্ক খুলে তার লেখাগুলি নিয়ে আসে৷ জব্দফা মোস্তার একটু নাক কুঁচকালেও লেখাগুলির শিরোনাম পড়ে একটু আগ্রহী হয়৷ বলে, বাহ, খারাপ কী? ভোদাই পাবলিক এর চেয়ে ভালো কিছু হজম করতে পারবে না৷

হেবো জব্দফা মোস্তারের বাড়িয়ে দেয়া দশটাকার নোটটা নিয়ে বিড়ি ফুঁকতে বাইরে বেরিয়ে যায়৷

হেবো ছাগাজনের সেই ছিলো শুরু৷ আর সে থামেনি৷ পর্বত্‍ মওলা একদিন রেগেমেগে তাকে লাথি দিয়ে বার করে দেয়, হেবো একটা মেসবাড়িতে গিয়ে ওঠে, আর দুই হাতে আইটি নিয়ে লিখতে থাকে৷ ইন্টারনেটে ইংরেজি পড়তে গিয়ে একটু সমস্যা হতো তার, কিন্তু রুমমেট এক ইংরেজিতে মাস্টার্স পাবলিককে সে ভাড়া করে ইংরেজি বুঝিয়ে বলার জন্য৷

তারপর বাকিটা তো সোজা, চোথা মেরে লিখে ফেলা৷ সম্পাদকরাও খুশি মনে ছাপায়, পত্রিকার পাতা কত হাবিজাবি দিয়ে ভরাট করতে হয়, আর এতো আইটি! হট টপিক৷

শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত হেবো ছাগাজন এখন একটা কোচিং সেন্টারে প্রাণপণে ইংরেজি শিখছে৷ তার বুকে অনেক আশা, চোখে অনেক আলো৷ দেশে প্রথম পাঁচজন ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একজন সে, হেলাফেলার ব্যাপার নয়৷


No comments: