Sunday, September 03, 2006

রহস্যগল্প ০০৪



গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া মহাবিরক্ত। এ পাড়ায় রহস্যভেদী পরিচয় দেয়াটাই বোকামি হয়েছে তার। বাঙালি জাতিটা বড় পাজি, যত্তোসব খুচরা সমস্যায় ভরা তাদের জীবন, আর খালি মাগনা কাজ উদ্ধারের ফন্দি! পয়সা দেয় না শালারা।

তিনি গম্ভীর মুখে বললেন, "দেখুন, ছিনতাই ঠিক আমার বিষয় নয় ... নট মাই কাপ অফ টী। ছিনতাই একটা বিচ্ছিরি বাজে বর্বর ঘটনা, ওতে কোন রহস্যের ছোঁয়াচ নেই। আপনি পুলিশ, র্যাব, সাংবাদিক, মিউনিসিপ্যালিটি, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, টিআইবি, সিআইএ ... যাকে খুশি তাকে ধরতে পারেন এ ব্যাপারে, কিন্তু আমাকে বাদে। আমি একজন রহস্যভেদী। মারদাঙ্গা সব রহস্য নিয়ে আমার কারবার, এইসব লুঙ্গিবদনাখুরপিমার্কা পাতি লুটের ঘটনায় গলানোর মতো নাক আমি আজও অর্জন করতে পারিনি। আই উড নেভার কনডিসেন্ড টু সলভিং সাচ আটার হোপলেস প্রবলেমস!" ভোগান্তির বোতলে চুমুক দেন তিনি, তারপর দন হুয়ানের সেই ভিকটিমা নারীর মতো বলেন, "আই উইল নেভার কনসেন্ট!"

কিন্তু পমি রহমান লোকটা সিনে সাংবাদিক, মহা নাছোড়বান্দা। কত নায়কের ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়েছে, কত নায়িকার বিয়ে ভেঙে দিয়েছে সে। মগাদিশু চৌরাসিয়ার মতো ভোলেভালা আদমীকে সে হিসেবের মধ্যেই গোণে না। সে বলে, "আরে কিছু না শুনেই বলছেন রহস্য নেই! আমার তো মনে হয় এটা একেবারে আন্তর্জাতিক মাপের কিসসা। আপনার লায়েক রহস্য যাকে বলে।"

মগাদিশু চৌরাসিয়া পাত্তা দেন না পমি রহমানের সূক্ষ তৈলমর্দনকে। তিলকে তাল বলে তাঁকে তেলানোর ষড়যন্ত্র ধরে ফেলেন তিনি নিমেষেই। বলেন, "আপনার লুঙ্গি ছিনতাই হয়েছে, এর মধ্যে কী আন্তর্জাতিকতা থাকতে পারে বলে আপনার ধারণা?"

পমি রহমান সোৎসাহে বলে, "আরে ঘটনা না শুনেই কেসটার সান্ডেমান্ডে কোলোজ করে দিচ্ছেন। শুনেই দেখুন না!"

অতএব চৌরাসিয়াকে শুনতে হয়। ঘটনা কিছু নয়, হপ্তাখানেক আগে পমি রহমান একটা সাদা লুঙ্গি পরে মোড়ের দোকানে সিগারেট কিনতে গিয়েছিলো। তখন সন্ধ্যা হয় হয়। একটা মশলা দেয়া মিষ্টি পান খেয়ে মুখে একটা সিগারেট ঝুলিয়ে ম্যাচ জ্বালিয়েছে, এমন সময় তার চোখে পড়ে এক ভুতুড়ে মূর্তি। আগাগোড়া নিনজা জামাকাপড় পরা, মুখে নিনজা নিকাব, মাথায় নিনজা হিজাব, হাতে একটা বিকট দর্শন ভোজালি, আর একটা সাদা কী যেন। ভয়ে পমি রহমান কাঁপতে থাকে, সে প্রায় পায়ে পড়ে যায় সেই অপমূর্তির, তার রগ না কাটতে শত অনুরোধ করে, অবশেষে সেই জীবটির দয়া হয়, সে সাদা জিনিসটি বাড়িয়ে দেয় পমি রহমানের দিকে। বস্তুটি আর কিছু নয়, একটি সাদা আন্ডারওয়্যার। পমি রহমান ঘাবড়ে গিয়ে সেটি পরে ফেলে, তখন সেই অপমূর্তি তার লুঙ্গি খুলে ফেলার হুকুম দেয়। লুঙ্গিটি খুলতে না খুলতেই সেটি নিয়ে এক ছুটে অন্ধকারে মিশে যায় নিনজা। পমি রহমান আন্ডারওয়্যার পরে একটা রিকশায় চড়ে চুপিসারে বাড়ি ফেরে। গাব্রিয়েল মগাদিশু চৌরাসিয়া কিছু বলেন না। শুধু তাই নয়। দু'দিন পর ঘটে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি। এবার ছিনতাই হয় পমি রহমানের লাল লুঙ্গিটি। একই ভাবে লাল আন্ডারওয়্যার পরে রিকশায় পড়ে বাড়ি ফিরতে হয় তাকে। তবে আগে কেউ খেয়াল করেনি, এবার উলটাদিকের বাড়ির মিসেস অর্ধকুমারী তাকে দেখে ফেলে এবং হাতছানি দিয়ে ডাকে। পমি রহমান চোঁ চাঁ দৌড় মেরে নিজের ফ্লাটে ঢুকে পড়ে।

মগাদিশু চৌরাসিয়া ভোগান্তিতে চুমুক দ্যান। পমি রহমান থামে না। কারণ গতকাল তার সবুজ লুঙ্গিটি একইভাবে ছিনতাই হয়েছে। বিনিময়ে অবশ্যই তার একটি সবুজ জাঙ্গিয়া জুটেছে, আর কালকে হরতাল ছিলো বলে সে রিকশা পায় নি, হেঁটে বাড়ি ফিরতে হয়েছে, পাশের ফ্ল্যাটের মিস মঞ্জুময়ূরী মিষ্টি হেসে স্বাগতম জানিয়েছে তাকে, সে অজুহাত দিয়েছে সে সবুজ আন্দোলনের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করার জন্যেই এই সুপারম্যানবৃত্তি করে বেড়াচ্ছে।

চৌরাসিয়া কিছু বলেন না। পমি রহমান ক্ষেপে ওঠে। বলে, "এই লুঙ্গিপাগল হাইজ্যাকারের হাত থেকে আমাকে রক্ষা করুন। আর পারি না। আমার ভালো ভালো তিনটা লুঙ্গি ঝেড়ে দিলো শালা। আর নাখাস্তা তিনটা জাঙ্গিয়া গছিয়েছে আমাকে, ওগুলি না পারি ফেলতে, না পারি পরতে! ... দেখবেন ওগুলি?"

চৌরাসিয়া বলেন, "ওগুলি দেখে আমি কী করবো?"

পমি রহমান বলে, "যদি কোন ক্লু টু পান?"

চৌরাসিয়া বলেন, "আপনি ওগুলি একবার পরিধান করার পর ওগুলি আর কোন ক্লু এর যোগ্য আছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। আপনি এখন আসুন। আপনার আর কোন লুঙ্গি ছিনতাই হবে না। আর এতো লুঙ্গি পরেন কেন, আমার মতো হাফপ্যান্ট পরতে পারেন না?"

পমি রহমান তেঁটিয়া কিসিমের লোক, বলে, "কিভাবে আপনি বুঝলেন আমার আর কোন লুঙ্গি ছিনতাই হবে না?"

চৌরাসিয়া গম্ভীর হয়ে বলেন, "বিশ্বকাপ শেষ। কাল ইতালি জিতেছে। দেখুন, উলটা দিকের ফ্ল্যাটের ছাদে পতপত করে উড়ছে ইতালির পতাকা। সবুজ, সাদা, লাল। যান, বাড়ি যান।"

পমি রহমান দাঁতে দাঁত পিষে হাতে কিল মেরে উঠে পড়ে। চৌরাসিয়া হতাশ মনে মাথা দোলান। রহস্যভেদ করলেও পয়সা জোটে না। কী আশ্চর্য কান্টাদের দেশ এইটা। তিনি ভোগান্তির বোতলে চুমুক দিয়ে তাকান উলটা দিকের বাড়ির দিকে। ছাদে উড়ছে ইতালির পতাকা।

সেই বাড়ি, যেখানে একটি ফ্ল্যাটে বাস করে সেই দুরাত্মা কার্বন মাঝি।

---------------
০৬ জুলাই, ২০০৬


No comments: